হরেকৃষ্ণ
শ্রাবণ কৃষ্ণপক্ষীয়া কামিকা একাদশী ব্রত কথা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে যুধিষ্ঠির- শ্রীকৃষ্ণ-সংবাদে বলা হয়েছে।
যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণকে বললেন-হে গোবিন্দ, হে বাসুদেব,শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম এবং মাহাত্ম্য সবিস্তারে আমার কাছে বর্ণনা করুন।
তা শুনতে আমি অত্যন্ত কৌতুহলী।
প্রত্যুত্তরে ভক্তবত্সল,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন - হে রাজন! পূর্বে দেবর্ষি নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে এই প্রশ্ন করলে তিনি যে উত্তর প্রদান করেছিলেন আমি এখন সেই কথাই বলছি।আপনি মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করুন।
একসময় ব্রহ্মার কাছে ভক্তশ্রেষ্ঠ নারদ জিজ্ঞাসা করলেন,হে ভগবান শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি,এর আরাধ্য দেবতা কে,সেই ব্রতের বিধিই বা কিরকম এবং এই ব্রতের ফলে কি পুণ্য লাভ হয় তা সবিশেষ জানতে ইচ্ছা করি।
আপনি কৃপা করে আমাকে তা জানালে আমার জীবন ধন্য হবে।
শ্রীনারদের কথা শুনে ব্রহ্মা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন।তিনি বললেন হে বত্স জগত্ জীবের মঙ্গলের জন্য আমি তোমার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিচ্ছি,তুমি তা শ্রবণ করো।
শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী 'কামিকা' নামে জগতে প্রসিদ্ধা।এই একাদশীর মাহাত্ম্য শ্রবণে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।ভগবান শ্রীহরির পূজা- অর্চনা অপরিমিত পূণ্য ফল প্রদান করে।গঙ্গা,গোদাবরী,কাশী, নৈমিষ্যারণ্য,পুষ্কর ইত্যাদি তীর্থ দর্শনের সমস্ত ফল একমাত্র কৃষ্ণপূজার মাধ্যমে কোটিগুণ লাভ করা যায়।
সাগর ও অরণ্য যুক্ত পৃথিবী দানের ফল,দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল অনায়াসে এই ব্রত পালনে লাভ হয়। যারা পাপপূণ্য সাগরে নিমগ্ন এই ব্রতই তাদের উদ্ধারের একমাত্র সহজ উপায় এইরকম পবিত্র পাপনাশক শ্রেষ্ঠ ব্রত আর জগতে নেই।শ্রীহরি স্বয়ং এই মাহাত্ম্য কীর্তন করেছেন।
রাত্রি জাগরণ করে যারা এই ব্রত পালন করেন তাঁরা কখনও দু:খ-দুর্দশাগ্রস্ত হন না।এই ব্রত পালনকারী কখনও নিম্নযোনি প্রাপ্ত হন না।কেশবপ্রিয়া তুলসীপত্রে যিনি শ্রীহরির পূজা করেন পদ্মপাতায় জলের মতো তিনি পাপে নির্লিপ্ত থাকেন।তুলসীপত্র দিয়ে বিষ্ণুপূজায় ভগবান যেমন সন্তুষ্ট হন,মণিমুক্তাদি মূল্যবান রত্ন মাধ্যমেও তেমন প্রীত হন না।
যিনি কেশবকে তুলসীমঞ্জরী দিয়ে পূজা করেন তার জন্মার্জিত সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে ব্রহ্মা বললেন-হে নারদ যিনি তুলসীকে প্রত্যহ দর্শন করেন তার সকল পাপরাশি বিদূরিত হয়ে যায়, যিনি তাঁকে স্পর্শ করেন তার পাপমলিন দেহ পবিত্র হয়, তাঁকে প্রণাম করলে সমস্ত রোগ দূর হয়,তাঁকে জল সিঞ্চন করলে যমও তার কাছে আসতে ভয় পান। শ্রীহরিচরণে তুলসী অর্পিত হলে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয়।
তাই হে কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনী তোমায় প্রণাম করি।যে ব্যক্তি হরিবাসরে ভগবানের সামনে দীপদান করেন চিত্রগুপ্তও তাঁর পু্ণ্যের সংখ্যা হিসাব করতে পারে না। তার পিতৃপুরুষেরাও পরম তৃপ্তি লাভ করেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে রাজন আমি আপনার কাছে সর্বপাপহারিনী কামিকা একাদশী মাহাত্ম্য বর্ণনা করলাম।অতএব যিনি ব্রহ্মহত্যা ভ্রুণহত্যা পাপবিনাশিনী,মহাপুণ্যফলদায়ী এই ব্রত পালন করবেন ও এই মাহাত্ম্য শ্রদ্ধা সহকারে পাঠ অথবা শ্রবণ করবেন তিনি সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করবেন!!
★পারনঃ- পরেরদিন রোজ বৃহস্পতিবার সকাল
৫:২৯ থেকে ৯.৫২ এর মধ্যে।
একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব। প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।
একাদশীর সমস্ত #শাস্ত্রীয় প্রমাণ ||#একাদশী কিভাবে পালন করবেন || আগেরদিন থাকবেন নাকি পরের দিন || #বিদ্ধা একাদশী কি|| #মহাদ্বাদশী কি|| কি খাওয়া যাবে কি খাওয়া যাবে না || কি করা যাবে না || কিভাবে একাদশী করলে বেশি ফল হবে || পারন #মন্ত্র কি||
★একাদশী কিভাবে পালন করবেন?
নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা । তাই আপনারা যে নিয়মে, যে সময়ে পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয় ।আমরা একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মটি উল্লেখ করছি। এটি পালন করা সকলের উচিত ।।
১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন ।।
২। তা হতে অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।
৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করোন ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রহিয়াছে ।।
সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি আছে ,গোড়ীয় ধারায় বা মহান আচার্য্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা ( জল ব্যতীত ) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেগুলি সেমতে করলে সর্বোওম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু — সবজি , ফলমূলাদি গ্রহণ করতে পারেন ।
যেমন — গোল আলু , মিষ্টি আলু , চাল কুমড়ো , পেঁপে , ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তৈল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন, লবণ ব্যবহার্য । 👉আবার অন্যান্য আহায্য যেমন — দুধ ,কলা , আপেল , আঙ্গুর, আনারস, আখঁ,আমড়া, তরমুজ, বেল, মিষ্টি আলু , বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদি খেতে পারেন ।।
একাদশীতে পাচঁ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ—-
১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন –
চাউল,মুড়ি, চিড়া,সুজি, পায়েশ, খিচুড়ি, চাউলের পিঠা, খৈ ইত্যাদি।
২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন –আটা,ময়দা, সুজি ,বেকারীর রূটি , বা সকল প্রকার বিস্কুট ,হরলিকস্ জাতীয় ইত্যাদি ।
৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ;-ছাতু ,খই , রূটি ইত্যাদি।
৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — মুগ মাসকলাই , খেসারী , মসুরী, ছোলা অড়রহ , ফেলন, মটরশুটি, বরবঢী ও সিম ইত্যাদি ।
৫। সরিষার তৈল , সয়াবিন তৈল, তিল তৈল ইত্যাদি । উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয় ।।
উল্লেখ্য যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা , বিড়ি / সিগারেট পান কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো ।।
একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজের জীবনের
সদ্গতি হবে তা নয় । একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা / মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন , তবে সেই পুত্র ই (একাদশী ব্রত ) পিতা – মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে । একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নরকবাসী হবে , অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে। কাজেই একাদশী পালন করা আমাদের সকলেরই কর্তব্য ।।
★একাদশী পারণঃ (একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙ্গার যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে , সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে, প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার । নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হবে না ।
একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয় , নিরন্তর শ্রীভগবানের নাম স্মরণ , মনন ও শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয় । এদিন যতটুকু সম্ভব উচিত । একাদশী পালনের পরনিন্দা , পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষণ, ক্রোধ দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ।।
বিঃ দ্রঃ:- নিমোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়ঃ —একাদশী ব্রতের আগের দিন রাত ১২ টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোওম। ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাঁশ করে দাঁত ও মুখ গহব্বরে লেগে থাকা সব অন্ন পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোওম । সকালে উঠে শুধু মুখ কুলি ও স্নান করতে হয় ।।
একাদশীতে সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায় । একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। দাঁত ব্রাশঁ করার সময় অনেকের রক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে। তাই একাদশীর আগের দিন রাতেই দাঁত ভালো ভাবে ব্রাশঁ করে নেওয়াই সর্বোওম ।।
একাদশীতে চলমান একাদশীর মাহাত্ন্য ভগবদ্ভক্তের শ্রীমুখ হতে শ্রবণ অথবা সম্ভব না হলে নিজেই ভক্তি সহকারে পাঠ করতে হয় ।।
যারা একাদশীতে একাদশীর প্রসাদ রান্না করেন , তাদের পাচঁ ফোড়ঁন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিৎ ।কারণ পাঁচ ফোড়ঁনে সরিষার তৈল ও তিল থাকতে পারে যা বর্জনীয় ।।
একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ । তৈল( শরীরে ও মাথায় ) সুগন্ধি সাবান শেম্পু ইত্যাদি বর্জনীয় । 👉সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম — শেভ করা এবং চুল ও নখ কাটা নিষিদ্ধ ।।
★ একাদশীর সমস্ত শাস্ত্রীয় প্রমাণ✅
একাদশীর দিন যে অন্ন আহার করে সে মাতা, পিতা, ভাই ও গুরু হত্যাকারী। -স্কন্দ পুরাণ
"যে সকল মনুষ্য শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, রাম-নবমী, শিবরাত্রি, একাদশী ও হরিবাসরে এই পুন্যজনক পঞ্চপর্বদিনের নিয়ম পালন করেন না, তাহারা চন্ডাল অপেক্ষা অধিক পাপী হয়। বিশেষ করে এই সমস্ত নরাধম ব্রহ্মহত্যা জনিত পাপে সমাক্রান্ত হইয়া থাকে।"
রেফারেন্সঃ [ব্রহ্মবৈবর্তপুরান-প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায়-৩০, শ্লোক-১৫৩,১৫৪]
" একাদশীতে অন্ন ও তজ্জাতীয় বস্ত্ত ভোজনে মাতা, পিতা, ভ্রাতা ও গুরুহত্যা জনিত পাপ সঞ্চয় হেতু, পঞ্চশষ্যাদি ভোজনকারী ব্যক্তিগণ অন্যান্য পুণ্য কর্ম্মাদি আচরণ করিলেও শ্রীবিষুলোকে বা বৈকুণ্ঠে গমন করিতা পারেন না ।
(শ্রীহরিভক্তি বিলাস ১২/২১)
" ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ অথবা সন্ন্যাসী প্রভুতি যে আশ্রমীই হউক্ না কেন, একাদশী-ব্রত দিনে অন্নাদি বক্ষণ করিলে গোমাংসই ভক্ষণ করা হইয়া থাকে ।
(হরি ভক্তি বিলাস ১২/২৫)
" হে মহাদেবি ! যাহারা 'শ্রীহরিবাসর-ব্রত' দিনে অন্ন ভোজন করে, যমদূতগণ তাহাদের মুখে তপ্ত লোহাস্ত্র ক্ষেপণ করিয়া থাকে । "
(স্কন্দ পুরাণে উমা-মহেশ্বর সংবাদ)
একাদশীব্রত বর্জ্জন করিয়া অন্যব্রত অনুষ্ঠান করিলে হস্তগত মণি বর্জ্জন করিয়া পাথর কুড়ানোই সার হয় ।
(তত্ত্বসাগর) এই ব্রত বর্জ্জন করিয় অন্যসব ব্রতাচরণে প্রকৃতপক্ষে সুখি না হইয়া পরিশেষ ঐ সমস্ত ব্রতফল হইতে দুংখ অঙ্কুরই উদিত হয় ।
(হরি ভক্তি বিলাস -১২/১৭)
হরিবাসর ব্যাতীত দান তপস্যা তীর্থ স্নান কিংবা কোনরূপ পুণ্যাচরণদ্বারা মুক্তিলাভ হয় না ।
(স্কন্দঃপুরান)
দাবানল হইলে যেমন কিশুষ্ক কি আর্দ্র সকল কাষ্ঠ ভস্মীভুত হইয়া যায় তদ্রূপ শ্রীহরিবাসর ব্রতে জীবের পূর্ব্বাপর সকল পাপ বিনষ্ট হয় ।
(ব্রক্ষবৈবর্ত্ত পুরাণ)
শ্রীযমদেব পর্যন্ত তাঁহার দুতগণকে সাবধান করিয়া দেন যদি আমার ভাল চাহ তবে শত পাপ কলিলেও একাদশী ব্রতোপবাসকারীগণকে তোমরা পরিহার করিয়া চলিবে ।
(স্কন্দ পুরান)
#একাদশ্যামুপোষ্যৈব যঃ পূজয়তি মাং নিশি।
সোমবারে বিশেষেণ স মে ভক্ত ন নশ্যতি।।
(শিবগীতা ১৫/৩২)
🌿পদার্থ- একাদশ্যাম(একাদশী তিথিতে) উপোস( উপবাস) এব(থেকে/রেখে) যঃ(যে) পূজয়তি(পূজা করে,অর্চনা করে) মাং(আমাকে) নিশি(রাত্রিকালে)
সোমবারে(সোমবারে) বিশেষেণ(বিশেষতঃ) স(সে) মে(আমার) ভক্ত(ভক্ত) ন(নেই) নশ্যতি(বিনাশ প্রাপ্ত/ আপদ স্পর্শ হওয়া অর্থে)।।
অনুবাদ- #একাদশী_তিথিতে উপবাসী হইয়া রাত্রিকালে যে আমার পূজা করে এবং বিশেষত সোমবারে যে তা( উপবাসী হইয়া পূজা) করে, আমার সে ভক্তকে কোন আপদ স্পর্শ করিতে পারে না।
★ #একাদশী তিথি যদি পঞ্জিকাতে দুই দিন উল্লেখ থাকে,কোন দিন পালন করবেন, আগের দিন, না পরের দিন? অনেকে বলে #ইসকন তো আবার নতুন নিয়ম বের করছে, আমরা পালন করি আগের দিন,#ইসকন পালন করে পরের দিন।
#আশাকরি #ধৈর্যসহকারে #সম্পূর্ণ #পোষ্টটা #পরবেন#
#উত্তর: ইসকন সঠিকটাই পালন করছে।নিচে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হল
*গৌড়িয় বৈষ্ণব সম্প্রদায় কেন দশমী সংযুক্ত একাদশী পালন করে না এবং দ্বাদশী সংযুক্ত একাদশী পালন করে ? *
★#বিদ্ধাএকাদশী
অনেক সময় অন্যান্য পঞ্জিকাগুলোতে ‘গোস্বামীমতে পরাহে’ কথাটি লেখা থাকে। বৈষ্ণবগণ সেক্ষেত্রে পরদিন একাদশী ব্রত পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, পরদিন নামেমাত্র একাদশী তিথি থাকে কিংবা নাও থাকতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে সন্দিহান থাকেন। নিন্মোক্ত আলোচনায় তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে #শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাসধৃত #গরুড়পুরাণ ও #শিবরহস্য বচনে বলা হচ্ছে-
উদয়াৎ প্রাক্ যদা বিপ্র মুহূর্তদ্বয় সংযুতা।
সম্পূর্ণৈকাদশী নাম তত্রৈবাপসেদগৃহী ॥
(হ.ভ.বি ১২/১২১)
- “হে দ্বিজ! সূর্যোদয়ের পূর্বে দুই মুহূর্ত (৪৮x২=৯৬ মিনিট) একাদশী থাকলে তাকে সম্পূর্ণা একাদশী বলে। এ দিনেই উপবাস করা বিধেয়।”
#ভবিষ্যপুরাণ বচন-
অরুণোদয় বেলায়াং দশমী সংযুতা যদি।
অত্রোপোষ্যা দ্বাদশী স্যাৎ ত্রয়োদশ্যান্তু পারণম্ ॥
(হ.ভ.বি ১২/১২৪)
- “অরুণোদয় সময়ে দশমীবিদ্ধা একাদশী উপস্থিত হলে দ্বাদশীতে উপবাসপূর্বক ত্রয়োদশীতে পারণ করতে হয়।”
একাদশীতে সূর্যোদয়ের পূর্বে বা সূর্যোদয়কালে (১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে) যদি দশমী স্পর্শ হয়, তাকে দশমী বিদ্ধা বলে। দশমী বিদ্ধা একাদশী বাদ দিয়ে দ্বাদশী সংযুক্তা একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। এটাই সর্বশাস্ত্রসম্মত বিধি ★#বিদ্ধাএকাদশী পালনের ফল
শ্রীগরুড় পুরাণের পূর্ব্বখণ্ডে একাদশী মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে ১২৫তম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
মান্ধাতা চক্রবর্ত্ত্যাসীদুপোষ্যৈকাদশীং নৃপঃ।
একাদশ্যাং ন ভূঞ্জীত পক্ষয়োরুভয়োরপি ॥১॥
দশম্যেকাদশীমিশ্রা গান্ধার্য্যা সমুপোষিতা।
তস্যাঃ পুত্রশতং নষ্টং তস্মাত্ত্যং পরিবর্জ্জয়েৎ ॥২॥
দশম্যেকাদশী যত্র তত্র সন্নিহিতোহসুরঃ।
দ্বাদশ্যেকাদশী যত্র তত্র সন্নিহিতো হরিঃ ॥৩॥
বহুর্বাক্যবিরোধেন সন্দেহো জায়তে যদা।
দ্বাদশী তু তদা গ্রাহ্যা ত্রয়োদশ্যান্ত পারণম্ ॥৪॥
একাদশী কলাপি স্যাদুপোষ্যা দ্বাদশী তদা ॥৫॥
একাদশী দ্বাদশী চ বিশেষেণ ত্রয়োদশী।
ত্রিমিশ্রা সা তিথিগ্রাহ্যা সর্ব্বপাপহরা শুভা ॥৬॥
একাদশীমুপোষ্যৈব দ্বাদশীমথবা দ্বিজ।
ত্রিমিশ্রাঞ্চৈব কুর্ব্বীত ন দশম্যা যুতাং কচিৎ ॥৭॥
রাত্রৌ জাগরণং কুর্ব্বন্ পুরাণশ্রবণং নৃপঃ।
গদাধরং পূজয়াশ্চ উপোষ্যৈকাদশীদ্বয়ম্।
রুক্মাঙ্গদো যযৌ মোক্ষমন্যে চৈকাদশীব্রতম্ ॥৮॥
অনুবাদ: ব্রহ্মা বললেন, - প্রাচীনকালে মান্ধাতা নামে এক রাজা ছিলেন; তিনি একাদশীতে উপবাস করার ফলস্বরূপ সসাগরা ধরার একমাত্র অধীশ্বর হয়েছিলেন; অতএব শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে কেউ ভোজন করবে না। গান্ধারী দশমীসংযুক্তা একাদশীতে উপবাস করেছিলেন, এজন্য গান্ধারীর শত পুত্র বিনষ্ট হয়; অতএব দশমীযুক্তা একাদশী বর্জন করবে। তাতে কেউ উপবাস করবে না। দশমীযুক্তা একাদশীতে অসুর সন্নিহিত থাকে, দ্বাদশীযুক্ত একাদশীতে হরি সন্নিহিত থাকেন, তবে নানাবিধ শাস্ত্রের বাক্য-বিরোধ দৃষ্টে সন্দেহ উপস্থিত হলে, অর্থাৎ একদিনেই যদি দশমী একাদশী ও দ্বাদশীর যোগ হয়, তবে তখন দ্বাদশীতে উপবাস করে ত্রয়োদশীতে পারণ করবে। যদি দ্বাদশী দিনে এক কলা মাত্র একাদশীও থাকে, তবুও দ্বাদশী দিনেই উপবাস করা কর্তব্য। যেদিন একাদশী, দ্বাদশী ও ত্রয়োদশী এই তিথিত্রয়ের মিশ্রণ হয়, সে দিনে উপবাস করলে সর্বপ্রকার পাপ নাশ হয়। যেদিন শুদ্ধ একাদশী থাকে সে দিনেই উপবাস করা কর্তব্য, কিংবা দ্বাদশীযুক্ত একাদশীতেও উপবাস করতে পারে; অথবা যদি একদিন একাদশী, দ্বাদশী ও ত্রয়োদশী এই তিথিত্রয়ের মিলন হয়, তবে উপবাস করবে, উপরন্তু কখনও দশমীযুক্তা একাদশীতে উপবাস করবে না। রাত্রি জাগরণ, পুরাণশ্রবণ ও গদাধরের অর্চনা করে একাদশীর উপবাস করবে; রুক্মাঙ্গদ রাজা এরূপ একাদশীতে উপবাস করে মোক্ষপদ পেয়েছিলেন। ★##মহাদ্বাদশী প্রসঙ্গ
একাদশী ব্রত প্রসঙ্গে মহাদ্বাদশী সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। মহাদ্বাদশীর আগমন ঘটলেও শাস্ত্রমতে পরদিন ব্রত পালন করা বিধিসম্মত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আটটি মহাদ্বাদশীর উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে উন্মীলনী, ব্যঞ্জুলী, ত্রিস্পৃশা, পক্ষবর্ধিনী - এ চারটি তিথি ঘটিত এবং জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী ও পাপনাশিনী - এ চারটি নক্ষত্রঘটিত। সম্পূর্ণা একাদশী যদি বৃদ্ধি পেয়ে পরদিন সকালকে স্পর্শ করে তবে তাকে উন্মীলনী মহাদ্বাদশী বলে। সূর্যোদয় থেকে আরম্ভ করে একাদশী সম্পূর্ণা হলে এবং দ্বাদশীও পূর্ণ হয়ে তার পরের দিন ত্রয়োদশীতে কিছু অংশ থাকলে এ দ্বাদশীকে ‘ব্যঞ্জুলী’ বলা হয়। দিবাভাগের প্রথমে একাদশী তারপর সমস্ত দিন দ্বাদশী এবং শেষরাত্রিতে ত্রয়োদশী যুক্ত হলে তা ‘ত্রিস্পৃশা’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। অমাবস্যা বা পূর্ণিমা সম্পূর্ণ হয়ে প্রতিপদে কিছুমাত্র থাকলে তার পূর্বের দ্বাদশী তিথির নাম ‘পক্ষবর্ধিনী’ মহাদ্বাদশী। শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ‘পুনর্বসু’ নক্ষত্র যোগে ‘জয়া’, ‘শ্রবণা নক্ষত্র যোগে ‘বিজয়া, ‘রোহিণী’ নক্ষত্র যোগে ‘জয়ন্তী’ এবং ‘পুষ্যা’ নক্ষত্র যোগে ‘পাপনাশিনী’ মহাদ্বাদশী সংঘটিত হয়। এছাড়া হরিভক্তিবিলাসে শ্রাবণ ও গোবিন্দ দ্বাদশী নামে আরো দুটি দ্বাদশী ব্রতের উল্লেখ রয়েছে।
★##একাদশী পালন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়##
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই একাদশীর উপবাসের গুরূত্ব আরোপ করেছিলেন। শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তিসন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্দ পুরাণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, “যে মানুষ একাদশীর দিন পঞ্চশস্য আহার করে, সে সেই খাদ্যের সাথে সাথে তার পিতা, মাতা, ভ্রাতা, আত্মীয়স্বজন, ব্রাহ্মণ এমনকি গুরু হত্যার পাপও ভক্ষণ করে। যদি সে বৈকুণ্ঠলোকেও উন্নীত হয়, তবুও তার অধঃপতন হয়।” একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয়, এমনকি অন্ন এবং ডালও, কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সেদিন বিষ্ণুর প্রসাদ (অন্ন) পর্যন্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। বিধবা না হলেও শাস্ত্র অনুসারে একাদশীর ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করেছিলেন। (দ্রষ্টব্য- ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত” আদিলীলা, (১৫/৮-১০)
আপনি কী সকল পাপ থেকে মুক্ত হতে চান...
তাহলে প্রতিটি একাদশী পালন করুন....
"জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ,
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্ত বৃন্দ"
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণহরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে