(০৭/০৩/২০২৪ইং) রোজ বৃহস্পতিবার বিজয়া একাদশী
মহাব্রত। ★পারনঃ- পরেরদিন রোজ শুক্রবার কাল
সকাল ৬:১৩-১০:১০ এর মধ্য। ( সময় ঢাকা ইসকন মন্দিরের চার্ট
থেকে নেওয়া)
বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য :
স্কন্দপুরাণে এই একাদশী মহাত্ম্য এইভাবে বর্ণিত রয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে বাসুদেব! ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে যুধিষ্ঠির! এই একাদশী ‘বিজয়া’ নামে পরিচিত। এই একাদশী সম্পর্কে একসময় দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভু ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
(সকল একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করুন)
তিনি এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা আমি এখন তোমাকে বলছি। এই পবিত্র পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে বলে ‘বিজয়া’ নামে প্রসিদ্ধ।
পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন। সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন। সেই সময় লঙ্কাপতি রাবণ দেবী সীতাকে হরণ করে।
সীতার অনুসন্ধানে রামচন্দ্র চতুর্দিক ভ্রমণ করতে থাকেন। তখন মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। জটায়ু রাবণের সীতাহরণের সমস্ত বৃত্তান্ত রামচন্দ্রকে জানিয়ে মৃত্যুবরণ করে। এরপর সীতা উদ্ধারের জন্য বানররাজ সুগ্রীবের সাথে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।
ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায় হনুমান লঙ্কায় গমন করেন। সেখানে অশোক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরাম প্রদত্ত অঙ্গুরীয় (আংটি) তাঁকে অর্পণ করেন।
ফিরে এসে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে লঙ্কায় সমস্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন। হনুমানের কথা শুনে রামচন্দ্র সুগ্রীবের পরামর্শে সমুদ্রতীরে যান।
সেই দুস্তর সমুদ্র দেখে তিনি লক্ষ্মণকে বললেন- ‘হে লক্ষ্মণ! কিভাবে এই অগাধ সমুদ্র পার হওয়া যায়। তার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।’
উত্তরে লক্ষ্মণ বললেন- ‘হে পুরুষোত্তম! সর্বজ্ঞাতা আদিদেব আপনি, আপনাকে আমি কি উপদেশ দেব? তবে বকদালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বাস করেন। এখান থেকে চার মাইল দূরে তাঁর আশ্রম।
হে রাঘব, আপনি সেই প্রাচীন ঋষিশ্রেষ্ঠকে এর উপায় জিজ্ঞাসা করুন।’ লক্ষ্মণের মনোরম কথা শুনে, তারা সেই মহামুনির আশ্রমে উপনীত হলেন।
ভগবান রামচন্দ্র ভক্তরাজ সেই মুনিকে প্রণাম করলেন। মুনিবর রামচন্দ্রকে পুরাণপুরুষ বলে জানতে পারলেন। আনন্দভরে জিজ্ঞাসা করলেন- হে রামচন্দ্র! কি কারণে আপনি আমার কাছে এসেছেন, তা কৃপা কর বলুন।
শ্রীরামচন্দ্র বললেন- হে মুনিবর! আপনার কৃপায় সৈন্যসহ আমি এই সমুদ্র তীরে উপস্থিত হয়েছি। রাক্ষসরাজের লঙ্কা বিজয় করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
যাতে এই ভয়ঙ্কর সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে পারি তার উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি। মুনিবর প্রসন্নচিত্তে পদ্মলোচন ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে বললেন- ‘হে রাম! আপনার অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য যে শ্রেষ্ঠ ব্রত করণীয় আমি তা বলছি।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘বিজয়া’ নামক একদশী ব্রতপালনে আপনি নিশ্চয়ই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন। এই ব্রতের বিধি শ্রবণ করুন।
বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিন সোনা, রূপা, তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ও আমপাতা দিয়ে সুগন্ধি চন্দনে সাজিয়ে তার উপর সোনার নারায়ণমূর্তি স্থাপন করবেন।
একাদশীর দিনি যথাবিধি প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালা চন্দন পড়িয়ে উপযুক্ত স্থানে নারকেল ও গুবাক দিয়ে পূজা করবেন।
এরপর গন্ধ, পুষ্প, তুলসী, ধূপ-দ্বীপ নৈবেদ্য ইত্যাদি দিয়ে পরম ভক্তিসহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তনে সমস্ত দিন যাপন করবেন। রাত্রি জাগরণ করে অখন্ড ঘি-প্রদীপ প্রজ্বলিত রাখবেন।
দ্বাদশীর দিন সুর্যোদয়ের পর সেই কলস বিসর্জনের জন্য কোন নদী, সরোবর বা জলাশয়ের কাছে গিয়ে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পরে তা বিসর্জন দেবেন। তারপর ঐ মূর্তি বেদজ্ঞ ব্রহ্মণকে দান করবেন। এই প্রত প্রভাবে নিশ্চয়ই আপনার বিজয় লাভ হবে।
ব্রহ্মা বললেন- হে নারদ! ঋষির কথামতো ব্রত অনু
ষ্ঠানের ফলে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে শ্রীরামচন্দ্র অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন।
তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবেন তাদের এজগতে জয়লাভ এবং পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে।
হে যুধিষ্ঠির! এই কারণে এই বিজয়া একাদশী ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য। এই ব্রতকথার শ্রবণ-কীর্তন মাত্রেই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
*যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে
সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।
___স্কন্দপুরাণ*
একাদশীর সংকল্প মন্ত্রঃ
“ একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি । ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত ” ( হরিভক্তিবিলাস,বিলাস)
একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ ---
”অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥” (বৃ: না: পু: ২১/২০)
বিবাহিত নারীদের ত্রকাদশী করার শাস্ত্র নিদের্শঃ
(১)
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রণাঞ্চৈব যোষিতাম্।
মোক্ষদং কূর্ব্বতাং ভক্ত্যা বিষ্ণো:প্রিয়তরং দ্বিজাঃ।।
[ বৃহন্নারদীয় পুরাণ, অধ্যায়-২১ শ্লোক-২ ]
অনুবাদ:
ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য,শুদ্র এবং বিবাহিত স্ত্রীলোক - ইহাদিগের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি হউক, ভক্তি পূর্ব্বক একাদশী ব্রত পালন করে মুক্তি লাভ করতে পারে।
(২)
পতিসহিতা যা যোষিৎ করোতি হরিবাসরম্ ।
সুপুত্ৰা স্বামিসুভগা যাতি প্রেত্য হরের্গৃহম॥ ৭৬
যো যচ্ছতি হরেরগ্রে প্রদীপং ভক্তিভাবতঃ।
হরের্দিনে দ্বিজশ্রেষ্ঠ পুণ্যসঙ্গ্যা ন বিদ্যতে ॥৭৭
যাঙ্গনা ভর্ত্তৃসহিতা কুরুতে জাগরং হরেঃ।
হরের্নিকেতনে তিষ্ঠেচ্চিরং পত্যা সহ দ্বিজ ॥৭৮
[ পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক- ৭৬-৭৮ ]
বঙ্গানুবাদঃ
যে স্ত্রী পতি সহ একাদশীব্রত করে, সে সুপুত্রা স্বামি-সুভাগা হয়, মরণান্তে হরিগৃহ বৈকুন্ঠে যায়। দ্বিজ শ্রেষ্ঠ! একাদশীতে ভক্তিভাবে যে জন হরির অগ্রে প্রদীপ দান করে, তাহার পুণ্যের সংখ্যা নাই অর্থাৎ অগণিত পুণ্য লাভ করে । আর যে স্ত্রী স্বামীর সহিত একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করে, সে চিত্রকাল পতি সহ হরির নিকেতনে বাস করে।
(৩)
যা নারী স্বামীসহিতা কুর্য্যাচ্চ হরিবাসরম।
সুপুত্রা ভর্ত্তসুভগা ভবেৎ সা প্রতিজন্মানি।।
[ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড, ৫।১৯ ]
বঙ্গানুবাদঃ
যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়।
(৪)
যা নারী ভর্ত্তৃসহিতা করোত্যেকাদশীব্রতম্।
সুপ্ৰজা স্বামিসুভগা সা ভবেৎ প্রতিজন্মনি।
স্বামিনা সহ যা নারী কুরুতে জাগরং হরেঃ।
সা তিষ্ঠেদ্বিষ্ণুভবনে চিরং ভর্ত্রা সহ দ্বিজ ।।
[ পদ্মপুরাণ, ত্রিয়াযোগসারঃ অধ্যায়-২২ শ্লোক- ১০৫ ]
বঙ্গানুবাদঃ
যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সুপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়। আর যে নারী স্বামীর সঙ্গে জাগরানুষ্ঠান করে, সে স্বামীর সাথে সুচিরকাল বৈকুন্ঠধামে অবস্থান করে।
(৫)
দুর্ভাগা যা করোত্যেনাং সা স্ত্রী সৌভাগ্যমাপ্নুয়াৎ।
লোকানাঞ্চৈব সর্ব্বোষাং ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী।।
[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৪৮।৪ ]
বঙ্গানুবাদঃ
কোন দুর্ভাগা স্ত্রী যদি একাদশী ব্রত আচরণ করেন, তিনি সৌভাগ্য লাভ করেন। এই একাদশী ব্রত সর্বলোকের ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী, সর্ব্বপাপহারিণী ও গর্ভবাসনিবারিণী।
(৬)
সপুত্রশ্চ সভাৰ্য্যশ্চ স্বজনৈৰ্ভক্তিসংযুতঃ।
একাদশ্যামুপবসেৎ পক্ষয়োরভয়োরপি ॥
[ বিষ্ণুধর্মোত্তর, হ.ভ.বি., ১২।৪৭ ]
বঙ্গানুবাদঃ
পুত্র, ভার্যা (পত্নী) ও স্বজনবর্গের সহিত ভক্তিযুক্ত হয়ে উভয়পক্ষের একাদশীতে উপবাস কর্তব্য।"
Tags:
একাদশী