আগামীকাল (২৩.০৬.২০২১ইং) রোজ শনিবার পানিহাটির চিড়াদধি মহোৎসব।। এই চিড়াদধি মহোৎসব, কি 👇👇👇👇:আসুন জেনে নেই:👇👇👇👇 আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে আষাঢ় মাসের এক শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে পানিহাটির গঙ্গাতীরবর্তী এক বটবৃক্ষতলে চিড়াদধি মহোৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু ও রঘুনাথ দাস গোস্বামী লীলাবিলাস করার মধ্যদিয়ে। অদ্যাবধি বর্তমান এ মহোৎসবের ইতিহাস অত্যন্ত চমকপ্রদ।
শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু দীনহীন পাপী সকলকেই প্রেমভক্তি দান করেন। রাজার ছেলে রঘুনাথ দাস পালিয়ে রাজকীয় জীবন ও রাজকন্যা বিসর্জন দিয়ে পুরীতে মহাপ্রভুর নিকট যান প্রেমভক্তি লাভ করার জন্য। কিন্তু মহাপ্রভু এই প্রেমভক্তি ধন দিলেন না। কারন যার ধন তাকে না জানিয়ে যদি কেউ তা নিয়ে যাবার চেষ্টা করে তবে তাকে চোর বলে। মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভুর সম্পত্তি। রঘুনাথ নিত্যানন্দ প্রভুকে না জানিয়ে, মহাপ্রভুর চরন লাভের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মহাপ্রভু তাকে ফিরিয়ে দেন দুই দুইবার। একদিন রঘুনাথ দাস গোস্বামী জানতে পারলেন, পানিহাটির গঙ্গার তীরে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু পার্ষদগণসহ এসে অবস্থান করছেন। তিনি ভাবলেন, নিত্যানন্দ প্রভুর দর্শন লাভ করার এই অপ্রাকৃত সুযোগ কোনোক্রমেই হারানো উচিত নয়। তাই তিনি অচিরেই পানিহাটির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেদিন ছিল আষাঢ় মাসের শুক্ল ত্রয়োদশী তিথি। পানিহাটি পৌঁছে রঘুনাথ দাস গোস্বামী দূর থেকেই দেখতে পেলেন শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু গঙ্গাতীরে এক বটবৃক্ষ তলে স্বপার্ষদ পরিবেষ্টিত হয়ে উপবেশিত আছেন। দর্শন করা মাত্রই রঘুনাথ দাস গোস্বামী নিত্যানন্দ প্রভুর উদ্দেশ্যে সেখানেই দন্ড-বৎ প্রণতি নিবেদন করে পড়ে রইলেন। নিত্যানন্দ প্রভুর একজন সেবক তখন নিত্যানন্দ প্রভুকে জানালেন, “ঐ দূরে রঘুনাথ আপনাকে দন্ড-বৎ প্রণতি নিবেদন করে সেখানেই পড়ে আছেন।” এ কথা শুনে নিত্যানন্দ প্রভু স্নেহে বিগলিতভাবে রঘুনাথ দাসকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
..........চোরা, দিলি দরশন।.......
আয়, আয়, আজি তোর করিমু দণ্ডন ॥
(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, অন্ত্য ৬.৪৭)
নিত্যানন্দ প্রভুর আদেশে সেবকগণ রঘুনাথ দাসকে নিয়ে আসেন কিন্তু নিত্যানন্দ প্রভু কাছে ডাকলেও তিনি ইতস্তত করছিলেন। তখন নিত্যানন্দ প্রভু তাকে জোর করে ধরে আনলেন এবং রঘুনাথের মাথায় নিজ পাদপদ্ম স্পর্শ করে কৃপা প্রদান করলেন এবং বললেন, 🌿🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🌿
"নিকটে না আইস চোরা, ভাগ দূরে দূরে। আজি লাগ পাইয়াছি,শাস্তি দিমু তোমারে। দধি, চিড়া ভক্ষণ করাহ মোর গণে॥"
------(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, অন্ত্য ৬.৫০)
------- -------------------------------------------------- 🌿🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🌿 নিত্যানন্দ প্রভুর কাছ থেকে এ অপ্রাকৃত শাস্তি লাভ করে চিন্ময় আনন্দে বিহ্বল রঘুনাথ তখনই গ্রামে গ্রামে লোক পাঠিয়ে চিঁড়া, দই, দুধ, চিনি, সন্দেশ, কলা আনিয়ে সেখান এক অপূর্ব মহোৎসবের আয়োজন করলেন। তারপর দুধে চিড়া ভিজিয়ে এবং দই, চিড়া, কলা প্রভৃতি মেখে বড় বড় সাতটি পাত্রে তা নিত্যানন্দ প্রভুকে নিবেদন করেন। তখন নিত্যানন্দ প্রভু বিবেচনা করলেন, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর উপস্থিতি ব্যতীত এই মহোৎসব পূর্ণ হবে না। তাই তিনি দিব্য ভাবাবেশে ধ্যানের মাধ্যমে মহাপ্রভুকে আহ্বান করে সেখানে নিয়ে আসলেন। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু আসন ছেড়ে উঠে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে নিয়ে নিবেদনের জন্য রাখা সমস্ত পাত্রগুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন এবং বিভিন্ন পাত্র থেকে এক এক গ্রাস করে দই-চিড়া তুলে নিয়ে হাসতে হাসতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মুখে দিতে লাগলেন আর অনুরূপভাবে মহাপ্রভুও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর মুখে তুলে দিতে লাগলেন। অত্যন্ত ভাগ্যবান কয়েকজনই কেবল গৌরনিতাইয়ের এ অপ্রাকৃত লীলা দর্শন করেছিলেন। তাই অন্যান্য ভক্তগণ বুঝতে পারছিলেন না নিত্যানন্দ প্রভু কী করছেন। তারা দেখছিলেন নিত্যানন্দ প্রভু শূন্যে দধি-চিড়া প্রদান করছে এবং তা মিলিয়ে যাচ্ছে, আবার শূন্য থেকে চিড়া-দধি এসে নিত্যানন্দ প্রভুর মুখে প্রবেশ করছে। নিত্যানন্দ প্রভু তখন তার ডানদিকে একটি আসনে মহাপ্রভুকে বসিয়ে সমস্ত চিড়া, দই, দুধ ইত্যাদি নিবেদন করে সকলকে ‘হরি’ বলে ভোজন করতে আজ্ঞা দিলেন। আর নিত্যানন্দ প্রভুর এই নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ভুবন ‘হরি হরি’ ধ্বনিতে পূর্ণ হয়ে উঠল। শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর সাথে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর এ অপ্রাকৃত লীলা আজও ভক্তগণ স্মরণ করেন এবং প্রতিটি মন্দিরে ও বৈষ্ণবগৃহে এদিন চিড়া-দধির মহোৎসব পালিত হয়।