নদীয়ার জামাইরাজা মহাপ্রভুর জামাই ষষ্ঠী আজ নবদ্বীপে।। আজ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য, নবদ্বীপের জামাই। জৈষ্ঠ্যমাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী, অর্থাৎ জামাই ষষ্ঠীর দিন নবদ্বীপের মানুষ তাদের আরাধ্য দেবতাকে জামাই রূপে বরন করে নেয়। সারা ভারতবর্ষে,আরাধ্য দেবতাকে জামাইরূপে বরন করা বা পূজা করার ঋতি একমাত্র নবদ্বীপেই দেখতে পাওয়া যায়। সর্পদংশনে মহাপ্রভুর প্রথম শ্রী লক্ষীপ্রিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর বিবাহ হয় সনাতন মিশ্রের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সাথে। সন্যাস গ্রহণ করার সময় মহাপ্রভু বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী কে দিয়ে গেয়েছিলেন নিজেরই একখানি নিম কাঠের মূর্তি ও তাঁর ব্যবহৃত পাদুকা। এই মুর্তিই পূজিত হয় আজও মহাসমারোহে। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর উওর পুরুষ এবং বিষ্ণুপ্রিয়া সমিতির সহ সম্পাদক শ্রী সুদীন গোস্বামী বলেন আজ থেকে প্রায় ৩৫৫ বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে মহাপ্রভুর এই জামাই ষষ্ঠী পালন উৎসব। পারিবারিক সুত্রথেকে তিনি বলেন সম্ভবত ষষ্ঠীদাস গোস্বামী প্রথম মহাপ্রভুকে জামাই রূপে মহাপ্রভু মন্দিরে পূজা করেন। কিভাবে পালন করা হয় স্বয়ং ভগবানের এই ষষ্ঠী উৎসব? সুদিন গোস্বামী বলেন ভোর পাঁচটায় মঙ্গলআরতি ও কৃষ্ণ কীর্তন করে জামাই ষষ্ঠী র সূচনা হয়। অন্যান্ন দিনের থেকে আজকের আয়োজন সম্পূর্ণ পৃথক হয়।মহাপ্রভুকে দেওয়া হয় রূপোর রেকাবিতে বিভিন্ন ফল, রূপোর বাটিতে মিষ্টান্ন, রাজভোগ। একটু বেলা হওয়ার সাথে সাথে নবদ্বীপের প্রবীণ মহিলারা আসেন,ও মহাপ্রভুকে ষষ্ঠীর বাটা দেন,আম দূর্বা,পাখা,লালসুতা নিয়ে মহিলারা মহাপ্রভুকে ষাটের বাতাস করেন। এইসময় মহাপ্রভুকে নতুন ধূতি, পাঞ্জাবি তে জামাই রাজার বেশ দেওয়া হয়।। গলায় রজনীগন্ধার মালা ও হাতে গোলাপ ফুল দেওয়া হয়।। শ্রীচৈতন্য বিশেষজ্ঞ চৈতন্যময় নন্দ লিখেছেন বিভিন্ন শাক,চিড়ে,দই,রাজভোগ, পায়েস, খেতে ভালোবাসতেন মহাপ্রভু। তাই মধ্যাহ্ন ভোগের আয়োজনে মহাপ্রভুর প্রিয় কচুশাক,মোচা,শুক্ত,নানারকম তরকারি, ডাল,বিভিন্ন ভাজা, বেগুনের পাতুরি, ছানার ডালনা,পোস্তর পনির, আরো বিভিন্ন পদ নিবেদন করা হয়। বিকেলে মহাপ্রভুকে যে ভোগ দেওয়া হয় তাকে বলে উত্থান ভোগ,রূপোর রেকাবিতে ছানা, বিভিন্ন মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। এই ভাবে নদীয়ার নবদ্বীপ বাসী তাঁদের অন্তরের ভগবানের জামাই ষষ্ঠী উৎসব পালন করেন।। সুরথ চক্রবর্তী, বাংলার মন্দির ও শিল্পের ইতিহাস।। মহাপ্রভুর রান্না ঘরের ছবি সংগ্রহ করা হয় সুদীপ ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছ থেকে।
#ekadashi24