দূর্লভ চিত্র
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জীবদ্দশায় পুরী বা নীলাচলের রাজা প্রতাপরুদ্রের আদেশে অঙ্কিত সপার্ষদ শ্রীচৈতন্যদেবের শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ শ্রবনের চিত্র।
সঙ্গের ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে শ্রীনরেন্দ্র সরোবরের তীরে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর পারিষদদের সঙ্গে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ শ্রবন করছেন। ছবিটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তদের কাছে সুপরিচিত এই বিষয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই যা জানেন না তা হল এই ছবির উৎসটি কোথায়।
১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত শ্রী দীনেশচন্দ্র সেনের "History of Bengali Language and Literature" এবং ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত শ্রী যদুনাথ সরকার বিরচিত "Chaitanya's Life and Teachings" বই দুটি থেকে জানা যায় ১৫১২-১৫৩৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে পুরী বা নীলাচলের রাজা প্রতাপরুদ্র দেবের আদেশে ছবিটি আঁকা হয়েছিল।
শ্রীনরেন্দ্র সরোবরের তীরে অজ্ঞাত শিল্পীর দ্বারা অঙ্কিত ছবিটিতে মধ্যমণি হিসেবে দেখা যায় শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুকে। তাঁর ডানদিকে রয়েছেন নিত্যানন্দ প্রভু, শ্রীমদ্ভাগবত ব্যাখ্যারত গদাধর পন্ডিত, অদ্বৈত আচার্য্য (পক্ককেশ), শ্রীবাস আচার্য্য, শ্রী রূপ এবং সনাতন গোস্বামী এবং দন্ডায়মান অবস্থায় রয়েছেন হরিদাস ঠাকুর। সামনের দিকে দেখা যায় শ্রীগৌরহরির শ্রীপাদপদ্মমূলে সাষ্টাঙ্গে প্রনামরত স্বয়ং মহারাজা প্রতাপরুদ্র দেব। রাজার সামনে একটি ময়ূর দেখা যায়, যা সম্ভবত মহারাজের উচ্চ মর্যাদার প্রতীক হিসেবে অঙ্কিত হয়েছে।
শ্রীচৈতন্যদেবের তিরোধানের পরে জলরং দ্বারা অঙ্কিত এই চিত্রটি শ্রীনিবাস আচার্য্য নদীয়ায় নিয়ে আসেন এবং পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরী রাধামোহন ঠাকুরের মাধ্যমে ছবিটি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী খ্যাত মহারাজা নন্দকুমারের পরিবারের হাতে আসে। রাধামোহন ঠাকুর ছিলেন মহারাজা নন্দকুমারের দীক্ষাগুরু। মহারাজা নন্দকুমারের কন্যা সুমণির সঙ্গে বিয়ে হয় কুঞ্জঘাটার জমিদার পুত্র জগত চাঁদের এবং সেই সূত্রে ছবিটি শেষপর্যন্ত কুঞ্জঘাটার জমিদার বংশের হাতে আসে বলে কথিত আছে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সময়কাল বাংলার নবজাগরণের যুগ বলে পরিচিত। সেই একই সময়ে ইউরোপে শুরু হয়েছিল নবজাগরণের যুগ বা 'রেঁনেসা'। ইউরোপীয় শিল্পী লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ১৫০৩ খ্রীষ্টাব্দে আঁকেন তাঁর পৃথিবী বিখ্যাত ছবি "মোনালিসা"। এদিকে শ্রীচৈতন্যদেবের এই বিখ্যাত ছবিটিও অঙ্কিত হয় ১৫১২-১৫৩৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে, অতএব শ্রীচৈতন্যদেবের এই ছবিটি এবং মোনালিসার ছবির সময়কাল একই এমনটা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। শ্রীমহাপ্রভু চৈতন্যদেবের এই বিরল ও দুষ্প্রাপ্য ছবিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।