নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জয়!
"নিত্যানন্দ প্রভু সর্বত্র ভ্রমণ করেছিলেন। সবশেষে তিনি মথুরায় এলেন। তিনি বললেন, "এখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আমাকে প্রয়োজন, এখনই যাবার সময়।" তিনি নবদ্বীপে এলেন, মায়াপুর ধামে। এবং সেসময়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিভিন্ন ভক্তদেরকে প্রতিদিন প্রচারের জন্য বাইরে পাঠাতেন। তিনি তাঁর পার্ষদদেরকে বললেন, "এখন আমার নিত্য ভ্রাতা, আমার সহচর, তিনি মায়াপুরের পবিত্র ধামে এসেছেন। তিনি এখানে আছেন।" তাই তিনি দু'-তিন জন ভক্তকে খুঁজতে পাঠালেন, "তোমরা তাঁকে খুঁজে বের করো যেন আমরা সাক্ষাৎ করতে পারি।"
হরিদাস ও অন্যান্য ভক্তরা সবস্থানে খুঁজে দেখলেন, সারাদিনব্যাপী খুঁজলেন, প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি কুটির, প্রতিটি কুঁড়ে ঘর, সব জায়গায় খুঁজে দেখলেন। তাঁরা খুঁজতে থাকলেন, খুঁজতে থাকলেন এবং সবস্থানে খুঁজে বেড়াতে থাকলেন। এমনকি তাঁরা বস্তিতে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তাঁরা ধনী ব্যক্তিদের বাড়ির বাইরে, বাড়ির ভেতরে ও রান্না ঘরে, সর্বত্র, সম্পূর্ণ নগরীতে দেখলেন, তাঁরা চিরুণী অভিযান চালালেন। তাঁরা কোথাও খুঁজে পেলেন না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কাঁর কথা বলছেন? এই নিত্যানন্দ কোথায়? তাঁর এই ভ্রাতাটি কোথায়? আমরা এখনো তাঁর সহচরের সাক্ষাৎ পাইনি। গভীর রাতে তাঁর নিত্য পার্ষদেরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে ফিরে এলেন, "আমরা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছি।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, "হ্যাঁ! তোমরা ভগবানকে দেখে কীভাবে খুঁজে পাবে? নিত্যানন্দ হচ্ছেন প্রভু, তিনি হলেন ভগবান। কেবল খুঁজে দেখেই তোমরা ভগবানকে পেতে পারো না। তোমরা কি একটি আলোকবর্তিকা আনতে পারো? তোমরা কি মশাল আনতে পারো, তোমরা কি আলো নিয়ে সূর্যকে খুঁজতে পারো? সূর্য হচ্ছে স্বয়ং-প্রভ। যখন তিনি নিজেকে প্রকাশ করবেন, তখনই কেবল কেউ তাঁকে খুঁজে পাবে। তোমরা হচ্ছ স্বতন্ত্র জীব, তোমরা কীভাবে ভগবানকে খুঁজে পাবে, যদিনা তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন। কেবল দৃষ্টির মাধ্যমে কেউ তাঁকে খুঁজে পাবে না। ভক্তিযোগে তাঁর সেবা করার মাধ্যমে, তিনি তাঁর স্ব-ইচ্ছায় নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন।"
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, যিনি স্বয়ং কৃষ্ণ, যিনি পরম পুরুষোত্তম ভগবান, বললেন, "ঠিক আছে, আমি তাঁকে খুঁজতে পারি। চল যাওয়া যাক।" এবং তিনি তাঁর সকল পার্ষদদেরকে সাথে নিয়ে বের হলেন। নিত্যানন্দ প্রভু নন্দাচার্যের গৃহে অবস্থান করছিলেন। এবং যখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নন্দাচার্যের গৃহে গেলেন, সেখানে তিনি নিত্যানন্দ প্রভুকে দেখতে পেলেন। হরিবোল!! হরিবোল!! যখন দুই ভ্রাতা পরস্পরকে দেখলেন সারা বিশ্ব দিব্য আনন্দে কম্পিত হয়েছিল। নিতাই! গৌরাঙ্গ!
কেউই তাঁদের মধ্যকার প্রেমের গভীরতা বুঝতে সক্ষম
ছিলেন না। তাঁরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন এবং ক্রন্দন করলেন। তখন সকল ভক্তরা কীর্তন করতে শুরু করলেন,
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।"
~শ্রীল জয়পতাকা স্বামী,
সোমবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯,
লস এঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্র।
#ekadashi24