শ্রীশ্রীসঙ্কটনাশন লক্ষ্মীনৃসিংহ-স্তোত্রম্
(শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য-বিরচিত)শ্রীমৎপয়োনিধিনিকেতনচক্রপাণে ভোগীন্দ্রভোগমণিরঞ্জিতপুণ্যমূৰ্ত্তে ৷
যোগীশ শাশ্বত শরণ্য ভবান্ধিপোত
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ১ ॥
হে ক্ষীরসমুদ্রনিবাসিন! হে শ্রীমৎ-চক্রপাণে হে নাগগণাগ্রগণ্য অনন্তের ফণাস্থিত মনিসমূহে সুরঞ্জিত পুণ্যমূর্তে! হে যোগীশ্বর। হে সনাতন! হে সকলের শরণ্য। হে সংসারসমুদ্র-পারের পোত (নৌকা)! হে লক্ষ্মীনৃসিংহ! তুমি আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর অর্থাৎ হস্তপ্রসারণদ্বারা আমাকে অনুগৃহীত কর।১
ব্রহ্মেন্দ্ররুদ্রমরুদর্ককিরীটকোটি
সঙ্ঘট্টিতাঘ্ৰিকমলামলকান্তিকান্ত ।
লক্ষ্মীলসৎকুচসরোরুহরাজহংস
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ২ ৷৷
হে ইন্দ্র, মরুদ্গণ ও আদিত্যগণের কোটি কোটি কিরীট্ দ্বারা প্রণমিত-পাদপদ্ম! হে অমলকান্তিবিশিষ্ট! হে কমলার সরোজের রাজহংস! হে সলক্ষ্মীক শ্রীনৃসিংহদেব! তুমি আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।২
সংসারঘোরগহনে চরতো মুরারে আরোগভীকরমৃগপ্রসরাৰ্দ্দিতস্য ।
আর্ত্তস্য মৎসরনিদাঘনিপীড়িতত্স্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ৩ ॥
হে মুরারে! আমি সংসাররূপ ঘোর-গহন বনে পরিভ্রমণ করিতেছি। রোগরূপ ভীষণ হিংস্র জন্তুসকল আমাকে পীড়ন করিতেছে। আমি
মাৎসর্য্যরূপ গ্রীষ্মের পীড়নে পীড়িত হইয়া অতীব আৰ্ত্ত হইয়াছি। হে শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহদেব। ।। তুমি আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।৩
সংসারকূপমতিঘোরমগাধমূলং
সংপ্রাপ্য দুঃখশতসর্পসমাকুলস্য।
দীনস্য দেব কৃপণাপদমাগতত্স্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥৪॥
হে দেব! আমি অতি ঘোর অতলস্পর্শ ভবকূপে নিমগ্ন হইয়া শত শত দুঃখরূপ সর্পসমূহে সমাকুল হইয়াছি। হে শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ! দীন এবং নিতান্ত ক্লেশকর অবস্থায় পতিত আমাকে তুমি স্বীয় করাবলম্বন প্রদান কর।৪
সংসারসাগরবিশালকরালকাল নত্রুগ্রহগ্রসননিগ্রহবিগ্রহস্য ।
ব্যগ্রস্য রাগরসনোম্মিনিপীড়িতস্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ৫ ॥
হে শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ! সংসার সাগরে বিশাল করাল কালরূপ শুম্ভীর মুখব্যাদন করিয়া আমাকে গ্রাস করিতেছে, আমি নিয়ত নানা ক্লেশে অভিভূত হইয়াছি এবং রাগরসনা অর্থাৎ লোভরূপ তরঙ্গে পতিত হইয়া নিপীড়িত হইতেছি, তুমি আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।৫
সংসারবৃক্ষমঘবীজমনন্তকৰ্ম্ম
শাখাশতং করণপত্রমনঙ্গপুষ্পম্ ।
আরুহ্য দুঃখফলিতং পততো দয়ালো
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ৬ ॥
হে দয়ালু শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ! পাপসমূহ যাহার বীজ, অনন্ত কর্ম যাহার শত শত শাখা, ইন্দ্রিয়গ্রাম যাহার পত্র এবং মদন যাহার পুষ্প ও দুঃখ যাহার ফল, আমি সেই সংসার-বৃক্ষে আরোহণ করিয়া এখন পতিত হইতেছি। হস্তাবলম্বন প্রদান পূর্বক তুমি আমাকে রক্ষা কর।৬
সংসারসর্পঘনবক্তৃভয়োগ্রতীব্র দংষ্ট্রাকরালবিষদগ্ধবিনষ্টমূর্তেঃ ।
নাগারিবাহন সুধান্ধিনিবাস শৌরে
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ৭ ॥
হে গরুড়বাহন! হে সুধাসমুদ্রনিবাসিন। হে শৌরে! সংসাররূপ সর্প মুখব্যাদন করিয়া আমাকে দংশন করিয়াছে। তাহার করাল দন্তের উগ্রতর বিষে আমার সর্বাঙ্গ দগ্ধ হওয়ায় আমি বিনষ্ট হইতেছি। আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।৭
সংসারদাবদহনাতুরভীরোরুরু
জ্বালাবলীভিরতিদগ্ধতনরুহস্য ।
তৎপাদপদ্মসরসীশরণাগতস্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ৮ ॥
হে শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ! আমি সংসাররূপ দাবানলের দহনে অতিশয় আতুর হইয়াছি। সে দাবানলের ভয়ঙ্কর শিখাসমূহ মদীয় গাত্র রোমাবলী দগ্ধ করিতেছে। আমি তোমার পাদপদ্মরূপ সরোবরে বৈ আশ্রয় লইলাম। তুমি আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।৮
সংসারজালপতিতত্স্য জগন্নিবাস সৰ্বেন্দ্ৰিয়ার্থবড়িশার্থঝযোপমস্য ।
প্রোৎখণ্ডিতপ্রচুরতালুকমস্তকস্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ৯ ৷৷
হে জগন্নিবাস শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ! আমি সংসারজালে পতিত হইয়াছি। ইন্দ্রিয়ের বিষয়সকল বড়িশরূপে আমার তালুপ্রদেশ ও মস্তক খণ্ড খণ্ড করিতেছে। আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।৯
সংসারভীকরকরীন্দ্রকরাভিঘাত
নিষ্পিষ্টমৰ্ম্মবপৃষঃ সকলাৰ্ত্তিনাশ ।
প্রাণপ্রয়াণভবভীতিসমাকুলস্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ॥ ১০ ॥
হে সকল-আৰ্তি নাশন্ শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ। সংসাররূপ ভীষণ হস্তী স্বীয় শুণ্ডবিঘাতে আমারে দেহের মর্মস্থল নিষ্পেষণ করিতেছে। আমি মৃত্যুভয়ে অতীব ব্যাকুল হইয়াছি, আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।১০
অন্ধস্য মে হৃতবিবেকমহাধনস্য
চৌৱৈঃ প্রভো বলিভিরিন্দ্রিয়নামধেয়ৈঃ ।
মোহান্ধকূপকুহরে বিনিপাতিতত্স্য
লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্ ৷৷ ১১ ॥
হে প্রভো! আমি অজ্ঞান-অন্ধ। ইন্দ্রিয়নামক প্রবল তস্করগণ আমার বিবেকরূপ মহাধন হরণ করিয়া মহা অন্ধকূপের গভীর বিবরে আমাকে নিপাতিত করিয়াছে। হে সলক্ষ্মীক শ্রীনৃসিংহদেব! আমাকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।১১
লক্ষ্মীপতে কমলনাভ সুরেশ বিষ্ণো
বৈকুণ্ঠ কৃষ্ণ মধুসূদন পুষ্করাক্ষ
ব্রহ্মণ্য কেশব জনাৰ্দ্দন বাসুদেব।
দেবেশ দেহি কৃপণস্য করাবলম্বম্ ৷৷ ১২ ৷৷
হে লক্ষ্মীপতে। হে কমলনাভ! হে সুরেশ! হে বিষ্ণো! হে বৈকুণ্ঠনাথ! হে কৃষ্ণ! হে মধুসূদন! হে পদ্মলোচন! হে ব্রহ্মাণ্যদেব! হে কেশব! হে জনার্দন! হে বাসুদেব! হে দেবেশ!এই দীনকে হস্তাবলম্বন প্রদান কর।১২
যম্মায়য়োজ্জিতবপুঃ প্রচুরপ্রবাহ
মগ্নার্থমাত্রনিবহোরুকরাবলম্বম্ ।
লক্ষ্মীনৃসিংহচরণাব্জমধুব্রতেন
স্তোত্রং কৃতং সুখকরং ভুবি শঙ্করেণ ॥ ১৩ ৷৷
যাহার মায়াতে আক্রান্ত হইয়া পাঞ্চভৌতিক দেহ পরিগ্রহ করিতে হয়, সেই শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহের পাদপদ্মের মধুব্রত শঙ্কর প্রচুরপ্রবাহ মগ্ন অর্থ সম্বলিত সুখকর ‘করাবলম্বন’ নামক স্তব রচনা করিয়াছেন।১৩
ইতি সঙ্কটনাশন-লক্ষ্মীনৃসিংহস্ত্রোত্রং সম্পূর্ণম্ ॥
নৃসিংহ কবচম পড়তে নিচের লেখায় ক্লিক করুন