জয় শ্রীনৃসিংহদেব.
সহস্র_ব্রতের সম ফল লাভ হয় কেবল মাত্র একটি নৃসিংহ চতুর্দশী তিথি পালনের মাধ্যমে
-----------------------------------------------------------
সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করবেন না!
আগামি ৩১ বৈশাখ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ/১৫ মে ২০২২ খ্রিস্টাব্দ; রবিবার; নৃসিংহ চতুর্দশী! ভক্তবৎসল ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের আবির্ভাব তিথি!
গোধূলি_পর্যন্ত_নির্জ্জলা_উপবাস. যেহেতু নৃসিংহদেব গোধূলী লগ্নে আবির্ভুত হয়েছিলেন!
অতঃপর অসমর্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে জল, শরবত কিংবা আরো অসমর্থ হলে ফল গ্রহণ করা যাবে!
পারন- পরদিন অর্থাৎ সোমবার ভোর ৫.৩০ থেকে- সকাল ৯.৫৩ এর ভিতরে!
নৃসিংহদেব_হচ্ছেন_ভক্তরক্ষক.
ভগবানের নৃসিংহ রুপ সবচেয়ে উগ্র রুপ!
এই রুপ কেবল ভক্ত বিদ্বেষীদের জন্য!
ভক্তের অমঙ্গল নাশ করে তিনি সর্বদা ভক্তকে রক্ষা করেন।
অত্যাচারী ভক্ত বিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুকে বধ করে ভগবান নৃসিংহদেব প্রহ্লাদ মহারাজকে তাঁর আপন ক্রোড়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন।
হিরণ্যকশিপু কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করে।
ব্রহ্মা যখন হিরণ্যকশিপুকে দর্শন দেন, তখন হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মার নিকট অমরত্বের বর চাইলো!
এই বরের প্রার্থনা শ্রবণ করে #ব্রহ্মা বললেন-
হে হিরণ্যকশিপু!
তুমি যে বর চেয়েছো বৎস, সেটা আমি দিতে পারবো না। কারণ আমি নিজেই অমর নই। তাই তুমি এমন বর চাও, যা আমি দিতে পারব।
হিরণ্যকশিপু চিন্তা করলো, আমি এমন বর চাইব যা আমাকে কেউ হত্যা করতে পারবে না।
তখন হিরণ্যকশিপু একের পর এক বর চাইতে লাগলো-
হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা!
আপনি যদি আমার অভীষ্ট বরই দান করতে চান, তবে এই বর দেন যাতে আপনার কোনো সৃষ্ট প্রাণী দ্বারা যেন আমার মৃত্যু না হয়!
কোন দেবতা, অসুর, প্রাণী, পশু, পাখি কিংবা যক্ষ বা রাক্ষস দ্বারা যেন আমার মৃত্যু না হয়।
আকাশে, পাতালে, মৃত্তিকায়, দিনের বেলা, রাতের বেলা, ঘরে, বাইরে যেন আমার মৃত্যু না হয়!
কোনও অস্ত্রের দ্বারা যেন আমার বধ না হয়!
আমি যেন কখনো ব্যাধিগ্রস্ত বা জরাগ্রস্ত না হই।
ব্রহ্মা বললেন- তথাস্তু!
বর পেয়ে হিরণ্যকশিপু নিজেকে অমর ভাবতে শুরু করলো!
কঠোর অত্যাচার বৃদ্ধি করলো দেবতাদের ওপর।
ভগবান_বিষ্ণুর প্রতি বিদ্বেষ জ্ঞাপন করতে শুরু করলো, সব জায়গা থেকে ভগবান বিষ্ণুর বিগ্রহ সরাতে আদেশ দিলো।
ভগবান বিষ্ণুর নাম জপ না করে নিজের নাম জপ করতে সবাই আদেশ করলো।
দেবতাগণ মনের দুঃখে ভগবান বিষ্ণুর নিকট গিয়ে আর্তনাদ জানালেন।
ভগবান অসুরকে বিনাশ করে ধরণীতে শান্তি আনয়নের লক্ষে প্রিয় ভক্ত প্রহল্লাদ মহারাজকে হিরণ্যকশিপুর কোলে পাঠালেন। #হিরণ্যকশিপু_এবং_কয়াদুর কোল আলো করে তাদের পুত্র সন্তান রুপে #প্রহ্লাদ_মহারাজ আসলেন।
প্রহ্লাদ মহারাজ ছোটবেলা থেকে ভগবান বিষ্ণুর প্রতি প্রীতি দেখাতেন। সদা হরি গুণগানে মুখরিত থাকতেন। প্রহ্লাদের মুখে হরি গুণগান শুনে হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।
কিরে! তুই আমার পুত্র হয়ে আমার শত্রুর গুণগান করিস?
আমি তোর জন্মদাতা পিতা, তাই আমিই তোর ভগবান!
কিন্তু প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন- তুমি কি করে আমার ভগবান হও?
ভগবান হলেন- শ্রীবিষ্ণু!
তিনি জগতপালক, তিনি জগতের পিতা ও বিধাতা।
তুমি তো কেবল আমার এই জড়জগতের পিতা আর বিষ্ণুদেব আমার নিত্য পিতা।
তখন হিরণ্যকশিপু ক্রোধান্বিত হয়ে বললো-
আমিই জগতের প্রভু! আমি সবচেয়ে ক্ষমতাধর!
আজ থেজে তুই আর হরিনাম করবি না!
কিন্তু প্রহ্লাদ মহারাজ তাঁর সিদ্ধান্তে অটল।
বাধ্য হয়ে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদ মহারাজকে হত্যা করার জন্য পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দিলো, পাগলা হাতির পায়ের নিচে পেষ্ঠন করলো, জলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করলো, বিষাক্ত সর্প দ্বারা ছোঁবল দেওয়ালো, বিষ পানে হত্যার চেষ্টা করলো।
কিন্তু সব চেষ্টাই বিফল হলো।
#রাখে_হরি_মারে_কে?
হরি যার সহায় বল! দুষমন তার পায়ের তল!
এতকিছু করেও যখন প্রহ্লাদ মহারাজকে বধ করা সম্ভব হয়নি, তখন হিরণ্যকশিপু আশ্চর্য হয়ে প্রহ্লাদকে বললো-
কে তোকে রক্ষা করে পুত্র?
এত কিছুতেও কেন তোকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি?
প্রহ্লাদ মহারাজ বিনীতভাবে উত্তর দিলেন- আমার শ্রীহরিই সর্বদা আমাকে রক্ষা করেন! তিনি সর্ববিরাজমান।
এখনো সময় আছে পিতা- তুমি ভগবান শ্রীহরির চরণে শরণ নাও।
হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলো-আমি শরণ নেব!
কি বলছিস দুরাচার! আমি তোর পিতা! আমি এই ধরণীর অধীশ্বর! তোর শ্রীহরি সব জায়গায় আছে? এই ফটিক স্তম্ভে কি তোর হরি আছে?
নিশ্চই আছেন পিতা!
দেখি তোর হরি আছে কিনা? এই বলে যখন হিরণ্যকশিপু ফটিক স্তম্ভে আঘাত করলো-
ভগবান বিষ্ণু উগ্র নৃসিংহদেব রুপ ধারণ করে ফটিক স্তম্ভ থেকে বের হয়ে আসলেন।
নৃসিংহদেব হিরণ্যকশিপুকে উরুর মাঝে রেখে চৌকাঠের নিকট গোধূলি লগ্নে নখ দ্বারা বধ করলেন।
#নৃসিংদেব_বললেন- দেখ হিরণ্যকশিপু-
তোমার বরের সম্মান রেখেই তোমায় বিনাশ করছি!
না ঘরে, না বাহিরে- তোমাকে চৌকাঠে বধ করছি।
কোন অস্ত্র দ্বারা নয়- নখ দ্বারা বধ করছি।
না দিন না রাত- গোধূলি লগ্নে তোমায় বধ করছি।
না আকাশে, না পাতালে, না মৃত্তিকায়- আমি তোমাকে উরুতে রেখে বধ করছি।
আমার এই রুপ- না, মানুষ, না দেবতা, না পশু!
আমার এই রুপ মিশ্রিত রুপ! আমার এই রুপ কেবল ভক্ত বিদ্বেষীদের জন্য উগ্র রুপ।
ভগবান নৃসিংহদেবের রুপ দেখে দেবতারাও ভয় পেলেন।
ভগবানের এই রুপকে দেবতারাও পর্যন্ত শান্ত করতে পারেননি। তখন দেবতারা বললেন- একমাত্র প্রহ্লাদই পারেন ভগবানের এই রুপের উগ্রভাবকে শান্ত করতে।
প্রহল্লাদ মহারাজ আকুল মনে প্রভুর স্তব করতে শুরু করলেন। ভক্তের প্রার্থনাতে প্রভু আমার শান্ত হলেন।
প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে ভগবান নৃসিংহদেব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন- পুত্র আমি তোমার ভক্তিতে সন্তুষ্ট; তোমাকে দর্শন দিয়েছি! এখন তুমি কি বর চাও, প্রার্থনা কর আমার কাছে, আমি তোমাকে বর প্রদান করবো।
প্রহ্লাদ মহারাজ আকুল স্বরে বললেন- আমি আর কি চাইবো প্রভু! তুমি যার হয়ে যাও, তার কি আর কোন কিছু পাওয়ার বাকি থাকে! যদি বর দিতেই চাও- তাহলে আমার পিতাকে মুক্তি প্রদান করে দাও।
এই হলো হরিভক্তের করুণা। যে পিতা তাঁকে এত অত্যাচার করলো, কষ্ট দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করলো, প্রহ্লাদ মহারাজ সেই পিতার জন্যই ভগবানের নিকট মুক্তির প্রার্থনা করলেন।
ভগবান বললেন-- তথাস্তু!
তুমি আমার ভক্ত, তুমি যেহেতু বলেছো! অবশ্যই মুক্ত করে দেবো!
শুধু তোমার এই পিতাই মুক্তি লাভ করবে তা নয়,
যে গৃহে তোমার মত শুদ্ধ ভক্ত/বৈষ্ণব হবে তার, ২১ কুল আপনা থেকেই উদ্ধার হয়ে যাবে।
★পিতৃকুল- ১০কুল,
★মাতৃকুল- ১০ কুল,
এবং নিজের এক কুল অনায়াসে মুক্তি লাভ করবে!
আর আমার এই আবির্ভাব তিথি যারা শ্রদ্ধা সহকারে পালন করবে-
তারা অবশ্যই জন্ম-মৃত্যুময় সংসারে থেকে উদ্ধার পাবে!
@ekadashi24
-বর্ষে বর্ষে তু কর্তব্যং মমসন্তুষ্টি কারণম। মহাগুহ্যম ইদম্ শ্রেষ্ঠং মানবৈর্ভবভীরুভিঃ।। অর্থাৎ আমার(ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব ) সন্তুষ্টির লক্ষ্যে চতুর্দশী ব্রত কর্তব্য।
উত্তরমুছুন