শ্রী নৃসিংহদেবের চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য,,
" বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে শ্রীনৃসিংহদেব আবির্ভুত হয়েছিলেন,,তাই এই তিথিতে ব্রতপালন পুর্বক তাঁর পুজা ও উৎসব করতে হয়।।
শ্রীনৃসিংহদেব বলেছেন,,আমার ব্রতদিন জেনেও যে ব্যক্তি লঙ্ঘন করে, চন্দ্র-সুর্য যতদিন থাকবে ততদিবসে নরক যাতনা ভোগ করবে। যদিও আমরা তাঁর ভক্তরা এই ব্রত পালন করে থাকি,,তবুও প্রত্যেকের এই ব্রত পালন করার অধিকার আছে।।
প্রহ্লাদ মহারাজ ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের কাছে প্রার্থনা করে বললেন,,,, হে ভগবান, হে নৃসিংহদেব, হে সকল দেবগণের আরাধ্য প্রভু আপনাকে প্রণাম জানাই। এবং আমি জিজ্ঞাসা করছি,, হে প্রভু , তোমার প্রতি আমার ভক্তি কিরুপে উৎপন্ন হল? কিরুপে আমি আপনার প্রিয় ভক্ত হলাম,,,,,?
শ্রীনৃসিংদেব বললেন,, হে বুদ্ধিমান একান্ত মনে শোনো। প্রাচীন কালে তুমি ব্রাহ্মণ ছিলে, কিন্তু বেদপাঠ করনি। তোমার নাম ছিল বসুদেব এবং তুমি ছিলে বেশ্যাসক্ত। তোমার কোন সুকর্ম ছিল না,, কেবল একটি মাত্র আমার ব্রত করেছিলে। সেই ব্রত প্রভাবে তোমার এরকম আমার প্রতি ভক্তি হয়েছে।।
প্রহ্লাদ বললেন,,,, হে নৃসিংহদেব, হে অচ্যুত, হে প্রভু, আমি কার পুত্র ছিলাম এবং কি করতাম,,? বেশ্যাসক্ত অবস্হায় কিভাবে আপনার ব্রত পালন করলাম,,? দয়া করে বলুন,,,।।
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন,,পুরাকালে অবন্তীপুরে এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ছিল। তার নাম ছিল বসুশর্মা। ধর্মপরায়ণ ও বৈদিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানে তৎপর ছিলেন। এবং তাঁর স্ত্রী জগৎপ্রসিদ্ধা সুশীলা পতিব্রতা সদাচারিণী ছিলেন। তাদের পাঁচ পুত্র ছিল। চারজন ছিল সদাচারী, বিদ্বান, পিতৃভক্ত। কিন্তু কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিল অসদাচারী, সর্বদা বেশ্যাসক্ত,সুরাপায়ী। সেই কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিলে তুমি। নিত্য বেশ্যাগৃহেই তুমি বসবাস করতে। এক বনমধ্যে তুমি ও তোমার সেই বান্ধবী বেড়াতে গিয়েছিলে। তোমরা মনে করেছিলে দিনটা বেশ ভালোই কাটবে। কিন্তু তোমাদের নিজেদের মধ্যে চরিত্র বিষয়ে বিশেষ রকমের কলহ বেধে যায়। তোমাদের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে মৌনভাবে তোমরা আলাদাভাবে একটি স্হানে এসে বসেছিলে। সেখানে তুমি অতি পুরনো ধ্বংসাবশেষ গৃহ নিদর্শন স্বরুপ কিছু ইট পাথর দেখেছিলে। সেই নির্জন স্হানে আলাদাভাবে উপবেশন করে তোমরা দুইজন ক্রন্দন করছিলে আপন আপনভাবে। সারাদিন তোমরা অনাহারী ছিলে,,এমনকি জল পর্যন্ত পান করনি। সারারাতও তোমরা জাগরিত ছিলে। ক্লান্ত শরীরে দুঃখিত অন্তরে মনোমালিন্য ভাবে তুমি সেখানে শুয়ে পড়ে প্রার্থনা করছিলে,, হে ভগবান, হে শ্রীহরি, এই জগতের কত লোক সুন্দর! আমার মা-বাবা কত সুন্দর ধর্মপ্রাণ। আমার ভাইয়েরা কত সুন্দর! তারা নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান। কিন্তু আমি অধঃপতিত। আমি মহা মন্দমতি। আমি চরিত্রহীন। পথের পাগলের চেয়েও অধম। হে ভগবান, ভালো লোকেরা তোমার শরণাগত। আমি মুর্খ কারও শরণাগত নই। আমি অতি নিঃসঙ্গ।আমি বড় অসহায় অবস্হায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি,, হে ভগবান,, আমাকে বিশুদ্ধ জীবন দান করো,,। এভাবে তুমি ক্রন্দন করছিলে।।
আর তোমার বান্ধবী,, সেও একান্ত মনে প্রার্থনা করছিল, হে ভগবান,, আমি সমাজের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য স্তরের জীব। সভ্য সমাজ থেকে আমি বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন। এই জগতে অনেক নিষ্ঠাবতী স্বাধ্বী সুন্দরী নারী রয়েছে। আর,, আমি মহাপাপী গণিকাবৃত্তি করেই জীবন নষ্ট করেছি। প্রতিদিনই কেবল পাপের বোঝা বাড়িয়েছি। নরকযাতনা কতই না এই পোড়া কপালে অপেক্ষা করছে। ভদ্র সমাজে কেউ কোনদিনও আমার দিকে তাকাতেও চায় না। আমিও এই জগতের কোনও পথ খুঁজে পাই না। হে পরম করুনাময় ভগবান,, যদি তোমার অহৈতুকী কৃপাদৃষ্টি আমার প্রতি থাকে তবে দয়া করে আমার এই জীবন পরিবর্তন করে দাও! এভাবে সে আকুল অন্তরে ক্রন্দন করতে লাগলো।।
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন,, হে প্রহ্লাদ,, সেই স্হানটি ছিল আমার প্রাচীন মন্দির। সেই দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশী আমার আবির্ভাবের দিন। তোমারা উপবাসী ছিলে, রাত্রি জাগরণ করছিলে,, জীবনের কল্যাণ প্রার্থনা করছিলে। অর্থাৎ অজ্ঞাতসারেই তোমরা আমার পরম-মঙ্গলময় চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলে। সেই ব্রত প্রভাবে তুমি এ জন্মে আমার প্রিয় ভক্তরুপে জন্মগ্রহণ করেছ। আর সেই বেশ্যাও স্বর্গলোকে অস্পরা জীবন লাভ করে ত্রিভুবনে সুখচারিনী হয়েছে।।
হে প্রহ্লাদ! আমার ব্রতের প্রভাব শোনো। সৃষ্টিশক্তি লাভের জন্য ব্রহ্মা আমার এই চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলেন। ত্রিপুরাসুরকে বধের উদ্দেশ্যে মহাদেব এই ব্রত করেছিলেন। স্বর্গসুখ লাভের জন্যই দেবতারা আগের জন্মে আমার ব্রত করেছিলেন। বেশ্যাও এই ব্রত প্রভাবে ত্রিলোকে সুখচারিনী হয়েছে। যে সমস্ত মানুষ আমার এই ব্রতশ্রেষ্ঠ পালন করবে,, শতকোটি কল্পেও তাদের সংসারে পুনরাগমন নেই। আমার ব্রত প্রভাবে অপুত্রক ভক্তপুত্র লাভ করে,, দরিদ্র ধনশালী হয়,, তেজস্কামী তেজঃলাভ করে,, রাজ্যকামী রাজ্য পায়,, আয়ুস্কামী দীর্ঘায়ু লাভ করে। স্ত্রীলোকেরা আমার এই চতুর্দশী ব্রত পালন করলে ভাগ্যবতী হয়,,এই ব্রত সৎপুত্র প্রদ,, অবৈধব্যকর ও পুত্রশোক বিনাশন, দিব্য সুখপদ। স্ত্রী-পুরুষ যারা এই উত্তমব্রত পালন করে,,, তাদের আমি সুখ ও ভুক্তি-মুক্তি ফল দান করি।।
হে প্রহ্লাদ,,, দুরাত্মাদের আমার ব্রত পালনে মতি হয় না। পাপকর্মেই সর্বদা তাদের মতি।। ( জয় হোক ভগবান শ্রীশ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক )
শেয়ার করে অন্যদের জানতে সহায়তা করুন-
@ekadashi24