শ্রীশ্রী পান্ডবা (নির্জলা) একাদশী ব্রতঃ-
আগামীকাল ১১/০৬/২০২২ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার
পালন করুন।
পারণঃ
বাংলাদেশ_সময়ঃ সকাল ৪.৫২ ঘটিকা থেকে সকাল ০৯.২৩ ঘটিকার মধ্যে।
ভারতীয়_সময়ঃ সকাল ৫.১৬ ঘটিকা হতে সকাল ৯.৩৫ ঘটিকার মধ্যে।
! একাদশী
একাদশীর সংকল্প মন্ত্রঃ
" একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি । ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত " ( হরিভক্তিবিলাস, ত্রয়োদশবিলাস)
🍏পান্ডবা (নির্জলা) একাদশীর মাহাত্ম্য🍏ঃ
----------------------------
~জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের এই নির্জলা একাদশী ব্রত সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে শ্রীভীমসেন-ব্যাস সংবাদে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে জনার্দন! আমি অপরা একাদশীর সমস্ত মাহাত্ম্য শ্রবণ করলাম এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমার কাছে বর্ণনা করুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন। কেননা তিনি সর্বশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ব পূর্ণরূপে জানেন। রাজা যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন-হে মহর্ষি দ্বৈপায়ন! আমি মানুষের লৌকিক ধর্ম এবং জ্ঞানকান্ডের বিষয়ে অনেক শ্রবণ করেছি। আপনি যথাযথভাবে ভক্তিবিষয়িনী কিছু ধর্মকথা এখন আমায় বর্ণনা করুন। শ্রীব্যাসদেব বললেন-হে মহারাজ! তুমি যেসব ধর্মকথা শুনেছ এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সে সমস্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। যা সুখে, সামান্য খরচে, অল্প কষ্টে সম্পাদন করা যায় অথচ মহাফল প্রদান করে এবং সমস্ত শাস্ত্রের সারস্বরূপ সেই ধর্মই কলিযুগে মানুষের পক্ষে করা শ্রেয়। সেই ধর্মকথাই এখন আপনার কাছে বলছি। উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত করবে।দ্বাদশী দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণের অর্চন করবে। এরপর ব্রাহ্মণদেরকে প্রসাদ ভোজন করাবে। অশৌচাদিদেও এই বৃত কখনও ত্যাগ করবে না। যে সকল ব্যক্তি স্বর্গে যেতে চায়, তাদের সারা জীবন এই ব্রত পালন করা উচিত। পাপকর্মে রত ও ধর্মহীন ব্যক্তিরাও যদি এই একাদশী দিনে ভোজন না করে, তবে তারা যমযাতনা থেকে রক্ষা পায়। শ্রীব্যাসদেবের এসব কথা শুনে গদাধর ভীমসেন অশ্বত্থ পাতার মতো কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলেন- হে মহাবুদ্ধি পিতামহ! মাতা কুন্তী, দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকূল ও সহদেব এরা কেউই একাদশীর দিন ভোজন করেন না। আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করে। কিন্তু দু:সহ ক্ষুধাযন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস করতে পারি না। ভীমসেনের এরকম কথায় ব্যাসদেব বলতে লাগলেন- যদি স্বর্গাদি দিব্যধাম লাভে তোমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না। তদুত্তরে ভীমসেন বললেন-আমার নিবেদন এই যে, উপবাস তো দূরের কথা, দিনে একবার ভোজন করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ আমার উদরে 'বৃক' নামে অগ্নি রয়েছে।ভোজন না করলে কিছুতেই সে শান্ত হয় না। তাই প্রতিটি একাদশী পালনে আমি একেবারেই অপারগ। হে মহর্ষি! বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে নিশ্চয় করে বলুন। তখন ব্যাসদেব বললেন-জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে। তবে আচমনে দোষ হবে না। ঐদিন অন্নাদি গ্রহণ করলে ব্রত ভঙ্গ হয়। একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারোটি একাদশীর ফল লাভ হয়। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনে অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায, তা হলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয়। দ্বাদশী দিনে ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নানাদিকার্য সমাপ্ত করে শ্রীহরির পূজা করবে। সদাচারী ব্রাহ্মণদের বস্ত্রাদি দানসহ ভোজন করিয়ে আত্মীয়স্বজন সঙ্গে নিজে ভোজন করবে। এরূপ একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পুণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণ কর। সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায়। শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বলেছেন-'বৈদিক ও লৌকিক সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে যারা একমাত্র আমার শরণাপন্ন হয়ে এই নির্জলা একাদশী বৃত পালন করে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়।' বিশেষত কলিযুগে ধন-সম্পদ দানের মাধ্যমে সদ্গতি বা স্মার্ত সংস্কারের মাধ্যমেও যথার্থ কল্যাণ লাভ হয় না। কলিযুগে দ্রব্যশুদ্ধি নেই। কলিতে শাস্ত্রোক্ত সংস্কার বিশুদ্ধ হয় না। তাই বৈদিক ধর্ম কখনও সুসম্পন্ন হতে পারে না। হে ভীমসেন! তোমাকে বহু কথা বলার আর প্রয়োজন কি? তুমি উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না। যদি তাতে অসমর্থ হও তবে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে অবশ্যই নির্জলা উপবাস করবে। এই একাদশী ব্রত ধনধান্য ও পুন্যদায়িনী। যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিষ্ণুদূতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান। শ্রীভীমসেন ঐদিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে থাকায় এই একাদশী 'পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী একাদশী' নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। এই নির্জলা একাদশীতে পবিত্র তীর্থে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয়ে যায়। যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে এই একাদশী মাহাত্ম পাঠ বা শ্রবণ করেন তাঁর স্থান হয় বৈকুন্ঠধাম ।
একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ ---
"অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥" (বৃ: না: পু: ২১/২০)
🔴আগামী ১২ই জুন ২০২২ ইং,
বাংলা ২৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ ,রবিবার➡️
(পানিহাটি চিড়া -দধি উৎসব/ দন্ড মহোৎসব)
পানিহাটি চিড়া-দধি উৎসব কি/ কেন করা হয়❓❓❓
✳️আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগের কাহিনি। হুগলি জেলার অন্তর্গত শ্রীকৃষ্ণপুরের জমিদার শ্রীগোবর্ধন মজুমদার। যার সেইসময়ে মাসিক আয় ছিল বিশ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা। তাঁর একমাত্র পুত্র হলেন শ্রীচৈতন্য পার্ষদ রঘুনাথদাস গোস্বামী।সব ঠিক ঠাকই চলছিল। কিন্তু আচমকা একদিন ঘটে গেল সেই অনভিপ্রেত ঘটনা। শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর আশীর্বাদ না নিয়ে রঘুনাথ সেদিন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপার্শীবাদ লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন।
🟨এ কথা জানা মাত্রই বিরাগভাজন হন তিনি । তিনি রঘুনাথকে এজন্য শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেন। রঘুনাথকে জানিয়ে দেন- তোমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। প্রস্তুত হও। রঘুনাথ হাসি মুখে নত মস্তকে শাস্তি মাথা পেতে নেন। তখন শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু বলেন- 'রঘুনাথ, তোমাকে শ্রী শ্রী নিত্যানন্দ-গৌরাঙ্গের ভক্তদের চিড়া-দধি ভোজন করাতে হবে। এটাই হল তোমার দন্ড। আনন্দের সঙ্গে রঘুনাথ সেদিন এই দন্ড গ্রহণ করেছিলেন।"
🟥সেদিন থেকেই এই দিনটি শুরু হয় যা চিড়া- দধি / দন্ড মহোৎসব নামে খ্যাত ।
🟪দন্ড মহোৎসবে হাজির হয়েছিল মহাপ্রভুর দিব্য স্বরূপ
এরপর যে ঘটনা ঘটেছিল তা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে মহাপ্রভু ভক্তদের কাছে। সে কথা বলছিলেন মায়াপুর ইসকনের জন সংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস। " সেদিন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সন্ন্যাসীবেশে পুরীধামে অবস্থান করলেও নিত্যানন্দ প্রভুর আহ্বানে এই অপ্রাকৃত মহোৎসবে তাঁর দিব্য স্বরূপ হাজির হয়েছিল। সেই স্বরূপে তিনি শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর শ্রীহস্ত থেকে ভোগ গ্রহণ করেছিলেন পানিহাটিতে। রঘুনাথ হাজার হাজার ভক্তকে নিজের হাতে চিড়া-দধি প্রসাদ বিতরণ করেছিলান। কয়েকজন পার্ষদ ছাড়া শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এই দিব্যলীলা অন্যরা দর্শনের সৌভাগ্য লাভ করেত পারেননি।" ____( হরেকৃষ্ণ )___
#Ekadashi #ekadashi24