যোগিনী একাদশী ব্রত 🌿
পারণ ঃ পরেরদিন ( ২৫/৬/২০২২ )
০৬.১৩ থেকে ০৯.৪৪ এর মধ্যে !!
ব্রক্ষবৈবর্ত পুরাণে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদরুপে বর্ণিত আছে।যুধিষ্ঠির বললেন- হে বাসুদেব- আষাঢ় মাসের কৃষ্ণ পক্ষীয়া একাদশীর মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে মহারাজ! সকল পাপ বিনাশিনী ও মুক্তিপদ এই উত্তম ব্রতের কথা বলছি, আপনিও শ্রবন করুন। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী যোগিনী নামে খ্যাত। মহাপাপ নাশকারী এই তিথি ভবসাগরে পতিত মানুষের উদ্ধার লাভের একমাত্র নৌকা স্বরুপ।ব্রত পালন কারীদের পক্ষে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রতবলে প্রসিদ্ধ। এই প্রসঙ্গে আপনাকে একটি পৌরাণিক কাহিনী বলছি।
অলকা নগরে শিবভক্ত পরায়ন কুবের নামে এক রাজা ছিল।তিনি প্রত্যহ শিবপূজা করতেন। তার হেমমালী নামে একজন মালী ছিল। প্রতিদিন শিব পূজার জন্য মানস সরোবর থেকে সে ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে দিত। বিশালক্ষী নামে হেমমালীর এক পরমা রুপবতী পত্নী ছিল। সে তার সুন্দরী পত্নীর প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিল। একদিন সে তার স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়ল। রাজভবনে
যাওয়ার কথা ভুলে গেল। বেলা দুই প্রহর অতীত হল। অর্চনের সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা ক্রুদ্ধ হলেন। মালীর বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানে এক দূত প্রেরণ করলেন। দূত এসে রাজাকে বলল- সে গৃহে স্ত্রীর সাথে আনন্দে মত্ত। দূতের কথা শুনে কুবের অত্যন্ত রেগে তখনি মালীকে তার সামনে হাজির করতে আদেশ দিল। এদিকে মালীর কুবেরের পূজার সময় অতিবাহিত হয়েছে বুঝতে পেরে অত্যন্ত
ভয় পেল। তাই স্নান না করেই সে রাজার কাছে উপস্হিত হল। তাকে দেখামাত্র রাজা ক্রোধবশে চোখ রাঙিয়ে বললেন- রে পাপিষ্ঠ, দুরাচার! তুই দেব পূজার পুষ্প আনতে অবজ্ঞা করেছিস তাই আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তুই শ্বেতকুষ্ঠ গ্রস্থ
হয়ে যা এবং তোর প্রিয়তমা ভার্ষার সাথে তোর চির বিয়োগ সংগঠিত হোক। রে নীচ তুই এখনি এই স্থান থেকে ভ্রষ্ট হয়ে অধোগতি লাভ কর। কুবেরের এই অভিশাপে হেমমালীর পত্নীর সাথে স্বর্গ ভ্রষ্ট হয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরোগ
ভোগ করতে লাগল রোগের যন্ত্রনায় দিন অথবা রাত্রে কখনই সে সুখ পেত না। এভাবে শীত গ্রীষ্মে প্রচন্ড বেদনায় বহুকষ্টে সে জীবন জাপন করতে লাগল। কিন্তু দীর্ঘদিন মহাদেবের অর্চনের ফুল সংগ্রহের সুকৃতির ফলে সে শাপ গ্রস্ত হয়েও বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ শিবের বিস্মরণ কখনও হয়নি। একদিন হেমমালীর ভ্রমন করতে করতে হিমালয়ে শ্রী মার্কন্ডের ঋষির আশ্রমে উপস্তিত হল। কুষ্ঠরোগে পীড়িত স্বপত্নী হেমমালীকে দর্শন করে শ্রী মার্কন্ডেয় তাকে জিজ্ঞাস করলেন – তুমি কার অভিশাপে এইরকম নিন্দনীয় কুষ্ঠ রোগ গ্রস্ত হয়েছো ? সে উত্তর দিল- হে মুনিবর! রাজা ধনুকবেরের আমি ভৃত্য ছিলাম। আমার নাম হেমমালী। আমি প্রত্যহ মানস
সরোবর থেকে ফুল তুলে শিব পূজার জন্য রাজাকে দিতাম। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে একদিন স্ত্রীর মনোরঞ্জন হেতু কামাসক্ত হওয়ায় সেই ফুল দিতে বিলম্ব হয়। রাজার অভিশাপে এইরকম দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছি।পরোপকারই সাধুগণের স্বাভাবিক কর্ম। হে ঋষি শ্রেষ্ঠ! আমি অত্যন্ত অপরাধী। কৃপা করে আমার প্রতি প্রসন্ন হোন। তখন দয়ার্দ্র চিত্ত মার্কন্ডেয় মুনি বললেন- হে মালী! তোমার মঙ্গলের জন্য শুভফল প্রদানকারী এক ব্রতের কথা উপদেশ করছি। তুমি আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের
'যোগিনী' নামক একাদশী ব্রত পালন কর। এই ব্রতের পূন্য প্রভাবে তুমি অবশ্যই কুষ্ঠব্যাধি থেকে মুক্ত হবে।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- ঋষির উপদেশ শ্রবণ করে হেমমালী তাকে প্রনাম জানাল। পরে অত্যন্ত আনন্দে ঋষির আদেশমতো নিষ্ঠার সঙ্গে 'যোগিনী' একাদশী ব্রত পালন করল। এইভাবে হেমমালী সমস্ত রোগ থেকে মুক্ত হলো ও পত্নী সুখে জীবনযাপন করতে লাগল। হে মহারাজ যুধিষ্ঠির! আমি আপনার কাছে এই ব্রত উপবাসের মহিমা কীর্তন করলাম। এই ব্রত পালনে অষ্টাশি হাজার ব্রাম্মণকে ভোজন করানোর ফল লাভ হয়। যে ব্যক্তি এই মহাপাপ বিনাশকারী ও পূন্য ফল প্রদায়ী 'যোগিনী' একাদশীর কথা পাঠ এবং শ্রবণ করে সে অচিরেই সর্বপাপ থেকে মুক্ত হবে। 👏হরে কৃষ্ণ!
🍇🍍🥭🍏🍒
একাদশীর সংকল্প মন্ত্রঃ
" একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি । ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত " ( হরিভক্তিবিলাস, ত্রয়োদশবিলাস)
একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ ---
"অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥" (বৃ: না: পু: ২১/২০)
#Ekadashi #ekadashi24