আজ ২৩.০৮.২০২২ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার পবিত্র অন্নদা একাদশী ব্রত উপবাস।
পারণঃ আগামীকাল বুধবার সকাল ০৫.৩৭-০৯.০২ মিনিটের মধ্যে।
একাদশীর সংকল্প মন্ত্রঃ
" একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি । ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত " ( হরিভক্তিবিলাস, ত্রয়োদশবিলাস)
অন্নদা একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য
এই ভাদ্রবর্তী কৃষ্ণপক্ষীয়া অন্নদা একাদশীর মাহাত্ম্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে কৃষ্ণ! ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, তা শুনতে আমি অত্যন্ত আগ্রহী।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে রাজন! আমি সবিস্তারে এই একাদশীর কথা বর্ণনা করছি। আপনি একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করুন।
ভাদ্রের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীকে বলা হয় 'অন্নদা'। এই তিথি সর্বপাপবিনাশিনী। যিনি শ্রীহরির অর্চনে এই ব্রত পালন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হন। এমনকি এই ব্রতের নাম শ্রবণেই রাশি রাশি পাপ বিদূরিত হয়ে যায়। এই ব্রত প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক ইতিহাস রয়েছে।
প্রাচীন কালে হরিশচন্দ্র নামে এক নিষ্ঠাপরায়ণ সত্যবাদী, চক্রবর্তী রাজা ছিলেন। পূর্ব কর্মফল ও প্রতিজ্ঞার সত্যতা রক্ষায় তিনি রাজ্যভ্রষ্ট হন। অবস্থা এমন হল যে, তিনি নিজের স্ত্রী-পুত্র এবং অবশেষে নিজেকেও পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হলেন।
হে রাজেন্দ্র! এই পুণ্যবান রাজা চন্ডালের দাসত্ব স্বীকার করেও সত্যরক্ষার্থে দৃঢ়নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি শ্মশানে মৃতব্যক্তির বস্ত্রও কর রূপে গ্রহণ করতেন। এইভাবে তাঁর বহু বছর কেটে গেল।
দুঃখসাগরে নিমজ্জিত হয়ে 'কি করি' কোথায় যাই, কিভাবে এ দুর্দশা থেকে উদ্ধার পাই'- এই চিন্তায় তিনি দিনরাত্রি বিভোর হলেন। এমন সময় দৈবক্রমে পরদুঃখদুঃখী গৌতম ঋষি রাজার কাছে এলেন। রাজা মুনিকে দর্শন করে ভক্তিভরে প্রণাম করলেন। করযোড়ে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে একে একে নিজের সমস্ত কথা জানালেন। রাজার দুঃখের কথা শুনে মুনিবর বিস্ময়াপন্ন হলেন।
অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে তিনি বললেন- 'হে রাজন! ভাদ্র মাসে কৃষ্ণপক্ষের একাদশী অন্নদা নামে জগতে প্রসিদ্ধ। আপনি এই ব্রত পালন করুন। এই ব্রতপ্রভাবে আপনার সমস্ত পাপের বিনাশ হবে। আপনার ভাগ্যবশত আগামী সাত দিন পরেই এই তিথির আবির্ভাব হবে। ঐ দিন উপবাস থেকে রাত্রি জাগরণ করবেন। এইভাবে ব্রত উদযাপনে আপনার সমস্ত পাপক্ষয় হবে। হে রাজন! আপনার পুণ্যপ্রভাবে আমি এখানে এসেছি জানবেন। এইকথা বলে গৌতম মুনি অন্তর্হিত হলেন।
ঋষিবরের উপদেশ মতো তিনি শ্রদ্ধা সহকারে সেই ব্রত পালন করলেন। তার ফলে তাঁর সমস্ত পাপ দূর হল। হে মহারাজ! এই ব্রতের প্রভাব শ্রবণ করুন। যথাবিধি এই ব্রত পালনে বহু বছরের দুঃখভোগের অবসান হয়। ব্রতের প্রভাবে রাজা হরিশ্চচন্দ্রের সকল দুঃখ সমাপ্ত হল। আকাশ থেকে দেবগণ দুন্দুভিবাদ্য ও পুষ্পবর্ষণ করতে লাগলেন। নিষ্কণ্টক রাজ্যসুখ ভোগ করে অবশেষে আত্মীয়-স্বজন ও নগরবাসী সহ স্বর্গে গমন করলেন।
যে মানুষ নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করেন, তিনি শ্রীহরি চরণে ভক্তি লাভ করে অবশেষে দিব্যধামে গমন করেন। এই ব্রতের মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ ---
"অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥" (বৃ: না: পু: ২১/২০)
ববিহিতি নারীদের ত্রকাদশী করার শাস্ত্র নিদের্শঃ
(১)
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রণাঞ্চৈব যোষিতাম্।
মোক্ষদং কূর্ব্বতাং ভক্ত্যা বিষ্ণো:প্রিয়তরং দ্বিজাঃ।।
[ বৃহন্নারদীয় পুরাণ, অধ্যায়-২১ শ্লোক-২ ]
অনুবাদ:
ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য,শুদ্র এবং বিবাহিত স্ত্রীলোক - ইহাদিগের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি হউক, ভক্তি পূর্ব্বক একাদশী ব্রত পালন করে মুক্তি লাভ করতে পারে।
(২)
পতিসহিতা যা যোষিৎ করোতি হরিবাসরম্ ।
সুপুত্ৰা স্বামিসুভগা যাতি প্রেত্য হরের্গৃহম॥ ৭৬
যো যচ্ছতি হরেরগ্রে প্রদীপং ভক্তিভাবতঃ।
হরের্দিনে দ্বিজশ্রেষ্ঠ পুণ্যসঙ্গ্যা ন বিদ্যতে ॥৭৭
যাঙ্গনা ভর্ত্তৃসহিতা কুরুতে জাগরং হরেঃ।
হরের্নিকেতনে তিষ্ঠেচ্চিরং পত্যা সহ দ্বিজ ॥৭৮
[ পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক- ৭৬-৭৮ ]
বঙ্গানুবাদঃ
যে স্ত্রী পতি সহ একাদশীব্রত করে, সে সুপুত্রা স্বামি-সুভাগা হয়, মরণান্তে হরিগৃহ বৈকুন্ঠে যায়। দ্বিজ শ্রেষ্ঠ! একাদশীতে ভক্তিভাবে যে জন হরির অগ্রে প্রদীপ দান করে, তাহার পুণ্যের সংখ্যা নাই অর্থাৎ অগণিত পুণ্য লাভ করে । আর যে স্ত্রী স্বামীর সহিত একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করে, সে চিত্রকাল পতি সহ হরির নিকেতনে বাস করে।
(৩)
যা নারী স্বামীসহিতা কুর্য্যাচ্চ হরিবাসরম।
সুপুত্রা ভর্ত্তসুভগা ভবেৎ সা প্রতিজন্মানি।।
[ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড, ৫।১৯ ]
বঙ্গানুবাদঃ
যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়।
(৪)
যা নারী ভর্ত্তৃসহিতা করোত্যেকাদশীব্রতম্।
সুপ্ৰজা স্বামিসুভগা সা ভবেৎ প্রতিজন্মনি।
স্বামিনা সহ যা নারী কুরুতে জাগরং হরেঃ।
সা তিষ্ঠেদ্বিষ্ণুভবনে চিরং ভর্ত্রা সহ দ্বিজ ।।
[ পদ্মপুরাণ, ত্রিয়াযোগসারঃ অধ্যায়-২২ শ্লোক- ১০৫ ]
বঙ্গানুবাদঃ
যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সুপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়। আর যে নারী স্বামীর সঙ্গে জাগরানুষ্ঠান করে, সে স্বামীর সাথে সুচিরকাল বৈকুন্ঠধামে অবস্থান করে।
(৫)
দুর্ভাগা যা করোত্যেনাং সা স্ত্রী সৌভাগ্যমাপ্নুয়াৎ।
লোকানাঞ্চৈব সর্ব্বোষাং ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী।।
[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৪৮।৪ ]
বঙ্গানুবাদঃ
কোন দুর্ভাগা #স্ত্রী যদি একাদশী ব্রত আচরণ করেন, তিনি সৌভাগ্য লাভ করেন। এই একাদশী ব্রত সর্বলোকের ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী, সর্ব্বপাপহারিণী ও গর্ভবাসনিবারিণী।
(৬)
সপুত্রশ্চ সভাৰ্য্যশ্চ স্বজনৈৰ্ভক্তিসংযুতঃ।
একাদশ্যামুপবসেৎ পক্ষয়োরভয়োরপি ॥
[ বিষ্ণুধর্মোত্তর, হ.ভ.বি., ১২।৪৭ ]
বঙ্গানুবাদঃ
পুত্র, ভার্যা (পত্নী) ও স্বজনবর্গের সহিত ভক্তিযুক্ত হয়ে উভয়পক্ষের একাদশীতে উপবাস কর্তব্য।"
#Ekadashi #ekadashi24
hare krishna
উত্তরমুছুনgouranga
উত্তরমুছুন