জয় শ্রী নৃসিংহদেব
[আগামীকাল ২৬.০৫.২০২১ইং রোজ বুধবার পূর্ণগ্রাস চন্দ্র গ্রহণ। (চন্দ্রগ্রহনে ৯ ঘন্টা পূর্বে ভগবত সেবাদি সমাপন সূতক আরম্ভ মোক্ষান্তে সেবাদি করণীয়।)]
[পূর্বের পোষ্টে এ লক্ষ্য করুন আমরা কেন শ্রী নৃসিংহদেব ব্রত পালন করব, ব্রত কি ভাবে পারন করব এবং এ ব্রতের মাহাত্ম্য কি?]
সকল ভক্তদের অতি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি আজ (২৫/০৫/২০২১ইং) মঙ্গলবার ভক্তবৎসল শ্রীশ্রী নৃসিংহদেব ভগবানে আবির্ভাব ও অভিষেক মহোৎসব। এজন্য সকল ভক্তদের জানাই নৃসিংহ প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
উপবাস:- আজ গোধূলি লগ্নে শ্রীনৃসিংহদেবের অভিষেক। তারপর অভিষেকের চরণামৃত দিয়ে উপবাস ভেঙ্গে একাদশীর ন্যায় অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে নির্জলা ব্রত উত্তম।
পারণ:- ★ভারত সময় (আগামীকাল বুধবার সূর্য্যোদয়ের পড় ৯.২২ মিনিটের মধ্যে)
★বাংলাদেশ সময়:(আগামীকাল বুধবার সূর্য্যোদয়ের পড় ৯.৫২ মিনিটের মধ্যে)
(আশাকরি সকল সকল ভক্তরাই এই মহাব্রত পালন করছেন।)
ভগবান নৃসিংহদেব শুভ আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে সকল ভক্তবৃন্দরা মিলে একটু সময় নিয়ে জেনে নেই। শ্রীনৃসিংহদেবের প্রণাম, স্তব ও আবির্ভাব লীলা।
শ্রী নৃসিংহদেব স্তব ও প্রণাম:
শ্রীল সনাতন গোস্বামীকৃত স্তবঃ
জয় নৃসিংহ শ্রীনৃসিংহ।
জয় জয় জয় শ্রীনৃসিংহ॥
উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং
জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রং
মৃত্যোর্মৃত্যুং নমাম্যহম্॥
শ্রীনৃসিংহ, জয় নৃসিংহ, জয় জয় নৃসিংহ।
প্রহ্লাদেশ জয় পদ্মমুখ পদ্মভৃঙ্গ॥
অনুবাদঃ জয় নৃসিংহদেব, জয় শ্রীনৃসিংহদেব, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক! জয় হোক! জয় হোক! সর্বদিক প্রজ্জ্বলনকারী উগ্র বীর, মহাবিষ্ণু, যিনি মৃত্যুরও মৃত্যু স্বরূপ সেই ভীষণ ভদ্র নৃসিংহদেবকে প্রণাম জানাই। প্রহ্লাদের প্রভু, পদ্মা অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবীর মুখপদ্মের প্রতি ভ্রমর রূপ শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, নৃসিংহদেবের জয় হোক, জয় হোক।
প্রণাম মন্ত্র:
নমস্তে নরসিংহায় প্রহ্লাদাহ্লাদ-
দায়িনে।
হিরণ্যকশিপোর্বক্ষঃ শিলাটঙ্ক নখালয়ে॥
ইতো নৃসিংহঃ পরতো নৃসিংহো
যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ।
বহির্নৃসিংহো হৃদয়ে নৃসিংহো
নৃসিংহমাদিং শরণং প্রপদ্যে॥
তব কর কমলবরে নখমদ্ভূতশৃঙ্গং
দলিতহিরণ্যকশিপু তনুভৃঙ্গম্।
কেশব ধৃত-নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে॥
শ্রীশ্রী নৃসিংহদেবের আবির্ভাব মহিমা:
হিরণ্যকশিপুর কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার দর্শন লাভ করেন ও তার কাছে বর চাইলেন, অমরত্ব বর।
কিন্তু ব্রহ্মা বললেন," হে হিরণ্যকশিপুর! তুমি যে বর চেয়েছ সেটা আমি দিতে পারব না, কারণ আমি নিজেই অমর নই, তাই তুমি এমন বর চাও যা আমি দিতে পারব। তখন হিরণ্যকশিপুর চিন্তা করল আমি এমন বর চাইব যা আমাকে কেউ হত্যা করতে পারবে না।
তখন হিরণ্যকশিপুর বর চাইতে লাগলেন যে, "হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমার অভীষ্ট বরই দান করতে চান, তবে এই বর দেন যাতে আপনার কোন সৃষ্টির কোনও প্রাণী পথে, ঘাটে, দিনের বেলা, রাতের বেলা, ঘরে, বাইরে, জল, ভূমি, আকাশে, কোনও পশু বা কোনও অস্ত্রের দ্বারা আমাকে বধ করতে পারবে না।, এমনকি আমি ব্যাধিগ্রস্ত বা জরাগ্রস্ত না হই। ব্রহ্মা বললেন, তথাস্তু। তারপর শুরু হল হিরণ্যকশিপুরের অত্যাচার দেবতাদের ওপর। তখন ভগবানের লীলা শুরু হল তার শুদ্ধ ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজের মাধ্যমে। তাই ভগবানের ভক্ত হিসাবে আবির্ভূত হয়ে প্রহল্লাদ মহারাজ বিষ্ণুদেবের আরাধনা করছিল।
তখন তার পিতা তাকে বললেন, তোমার ভগবান কে?? সে বলত আমার ভগবান বিষ্ণুদেব। তখন হিরণ্যকশিপুর ক্ষীপ্ত হয়ে বলতে লাগলেন যে, অামি তোমার জন্মদাতা পিতা। তাই আমি তোমার ভগবান। কিন্তু প্রহ্লাদ বলল না, তুমি আমার ভগবান না, আমার ভগবান বিষ্ণুদেব। তিনি জগতপালক, শ্রীহরি। তিনি জগতের পিতা ও বিধাতা। তুমি তো কেবল আমার জড়জগতের পিতা, আর বিষ্ণুদেব আমার নিত্য পিতা। তখন হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে পাহাড় থেকে ফেলে দেয়, হাতির পায়ের নিচে দেয়, জলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করে আর প্রহল্লাদ শুধু তার প্রভু বিষ্ণুদেবকে স্মরন করতে থাকে।
কথায় আছে না রাখে হরি মারে কে। ভগবান যদি চান তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তি তাকে হত্যা করতে পারবে না। তাই যখন কোন কিছুর দ্বারা সম্ভব হল না তখন প্রহল্লাদকে কারাগারে নিক্ষেপ করল, শিকল দিয়ে বেধে রাখল আর মারতে লাগল। আর প্রহল্লাদ শুধু শ্রীহরিকে ডাকতে লাগল। তখন হিরণ্যকশিপুর এসে বলল, আজ তোকে কে বাচায় দেখি। তোর ভগবান কোথায় আছে বল? তখন বৈকুণ্ঠধামে মা লক্ষ্মীদেবী বললেন," হে প্রভু এখন কি হবে? প্রহল্লাদকে কে রক্ষা করবে? হিরণ্যকশিপু তো অমরত্ব বর লাভ করেছে, তাকে কে হত্যা করবে? তোমার ভক্তকে রক্ষা করবে কে?, তখন ভগবান বলেন যে, অমরত্ব বর পেয়েছে ঠিকই কিন্তু অমর না। আর প্রহল্লাদকে রক্ষা করবে তার ভক্তি। তার ভক্তি তাকে হিরণ্যকশিপুর হাত থেকে রক্ষা করবে। তখন হিরণ্যকশিপুর বলল তোর ভগবান কি এখানে আছে? প্রহল্লাদ বলল হা, আমার প্রভু সর্বত্রই বিরাজমান। এখানেও আছে। এই বলে হিরণ্যকশিপুর সে ঘরের চৌকাঠে পিলারে আঘাত করতে লাগলো তখন হঠাৎ সে স্তম্ভ থেকে বের হয়ে আসে ভক্তের ভগবান শ্রীহরি ভগবান বিষ্ণুদেব। তখন হিরণ্যকশিপুর বর অনুসারে তাকে বধ করতে লাগলেন, যে ঘরেও না বাইরেও না ঘরের চৌকাঠে কোন নর না পশুও না কিন্তু অর্ধেক পশু ও মানুষ নরসিংহ, কোন অস্ত্রের দ্বারা না, কিন্তু নখের দ্বারা বধ করা হয়েছে, সকালে না রাতেও না,কিন্তু গোধূলি লগ্নে অর্ধেক দিনও রাত মানে সন্ধ্যায়, জলেও না মাটিতে না আকাশেও না,কিন্তু হাটুতে রেখে নখের দ্বারা বধ করে। তাহলে চিন্তা করে দেখেন প্রভুর লীলা জগতেকে বোঝতে পারে যে ভক্তের ডাকে ভগবান তার ভক্তকে যেকোন উপায়ে রক্ষা করে এমন কি ভগবানের এই রুপ দেখে দেবতারা ও ব্রহ্মাণ্ড কেপে ওঠে। এ কি রূপ? হঠাৎ এই রূপের আবির্ভাব কেউ বুঝতে পারেনি,ভগবানের এই রূপকে দেবতারাও পর্যন্ত শান্ত করতে পারেনি। তখন দেবতারা বলল একমাত্র একজন পারে সে তার ভক্ত প্রহল্লাদ তখন প্রহল্লাদ প্রভুর কাছে স্তব, প্রার্থনা করতে লাগে তখন প্রভু ভক্তের প্রার্থনাই শান্ত হয় ও তাকে কোলে তুলে নেন ও প্রভু বলে হে ভক্ত প্রহল্লাদ আমি তোমাকে দর্শন দিয়েছি এখন তুমি কি বর চাও, প্রার্থনা কর আমার কাছে আমি তোমাকে বর দেব। তখন ভক্তের কি আর কিছু চাওয়ার অাছে যে জগতের প্রভু তার সামনে? তবুও ভগবান বলল তুমি একটা বর চাও যেহেতু আমি তোমার সামনে প্রকট হয়েছি তখন ভক্ত প্রহল্লাদ বলতে লাগল প্রভু তুমি আমার পিতাকে মুক্তি দাও। যেহেতু তিনি আমার জড়জগতে পিতা, তখন ভগবান বলল হে ভক্ত প্রহল্লাদ তথাস্তু। কিন্তু তোমার শুধু এই পিতা মুক্তি লাভ করবে না। যে গৃহে তোমার মত শুদ্ধ বৈষ্ণব ভক্ত হবে তার পূব পুরুষরাও মুক্তি লাভ করবে।
[সকল ধরনের ভুল-ভ্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]
বি:দ্র: (নিজে শুদ্ধ তিথি অনুযায়ী বৈষ্ণবীয় প্রতিটি ব্রত পালন করুন এবং শাস্ত্রীয় তত্ত্ব সম্পর্কে জানুন অন্যকে ব্রত পালন করতে উৎসাহিত করুন এবং আপনার সকল সনাতনী বন্ধুদের এই পেইজটি জানাতে পেইজে Invited করুন এই জন্য আপনাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রইল।)
Tags:
শ্রী নৃসিংহদেব