আঠার মোকাম তত্ত্ব
চূড়া মধ্যে চূড়ামণি ব্রহ্মপাশে স্থিতি।
পাট মধ্যে মহাবিষ্ণু করেন বসতি।।
চক্ষু মধ্যে কালাচাঁদ করিতেছে ধ্যান।
নাসিকাতে নিত্যানন্দ মধু করে পান।।
কর্ণেতে চৈতন্য গোঁসাই হয়ে সাবধান।
মুখেতে ভদ্রাক্ষ বসি বত্রিশ যোগান।।
জিহ্বাতে নারদ মুনি বাজায় কোন্দল।
জিহ্বা নিচে বসে নদী কায়া গঙ্গাজল।।
আল্জিহ্বায় সরস্বতী বামেতে শ্রীদাম।
কন্ঠদেশে শ্রীকানাই বাহুতে বলরাম।।
হস্ত মধ্যে শ্রীগোবিন্দ দান-অধিপতি।
সপ্তদ্বীপে জগন্নাথ করেন বসতি।।
নাভিমূলে ব্রহ্মা সদা করিতেছে লীলা।
লিঙ্গে মহাদেব বসে ল'য়ে চন্দ্রকলা।।
গুহ্যদ্বারে বসিয়াছে নাড়ুয়া গোপাল।
কামিনীর সঙ্গে কেলি বড়ই রসাল।।
হাঁটুতে শক্তির স্থিতি বসুমতী পায়।
আঠার মোকাম তত্ত্ব শুন সমুদায়।।
★(ধাম-তত্ত্ব)
বক্ষেতে মথুরা ধাম করিয়াছে স্থিতি।
মুখ দ্বারে শ্রীরাধিকা করেছে বসতি।।
ব্রহ্মরন্ধ্রে মস্তকেতে শ্রীগোলোক ধাম।
কর্ণদ্বয় হয় বটে শ্রীগোকুল নাম।।
রাধাকুন্ড শ্যামকুন্ড হয় নেত্রদ্বয়।
কালিন্দী যমুনা দুই নাসিকাতে রয়।।
জিহ্বার ভিতরে গোবর্ধনের কুঠুরী।
কহিলাম ধাম-তত্ত্ব শুন কর্ণ ভরি।।
★( দেহতত্ত্ব)
এইযে মানব দেহ কর নিরিক্ষণ।চতুরবিংশ তত্ত্বে ইহা হয়েছে গঠন।। পঞ্চভুত ঋররিপু একত্র করিয়া। তাহার মধ্য দশইন্দ্রিয় লইবে ধরিয়া।। মহাভুত অহংকার সহকারে মন। এই ২৪তত্ত্বে মানব দেহরি গঠন।। সহস্রাত পদ্মে হয় সহস্রার দল। মধ্যে একটা রামেশ্বর গোলক মন্ডল।। নাসামূলে দিঘল পদ্ম রক্ষণ্জ্যলাক্ষি। কণ্ঠজুড়ে ১৬দল পদ্ম দিল আঁখি।। রিদপদ্ন বিরাজিত দ্বাদশ যে দল।কূলকুন্ডলিনী দশ দল নাভীমূলে।।নাভীর নিম্ন ভাগে আছে এক সাগর। অষ্টাদশ পদ্ম আছে তাহার ভিতর।।তাহার মধ্য আছে নারী সাড়ে তিন কোটি। ৭২হাজার নারী তাতে আছে আঠি।।তাহার মধ্য সাতশত প্রাধান যে হয়।শতাধিক ২৪নারী তাতে শ্রেষ্ঠ হয়।।১২৪এর মধ্য ৩২সারি দেখ। বিশ্বধনী নামে ইহা হয়েছে উল্লেখ।। বিংশ ধনীর মধ্য চতুরবিংশ শ্রেষ্ঠ। চতুরবিংশে চতুরদশ হয়েছে গরিষ্ঠ।। এই চতুরবিংশের মধ্যে আছে নারী তিন। হিরা পিংগলা আর সুষমা প্রবিণ।। বাম পাশে হীরা আর দক্ষিণে পিংগলা। মধ্য ভাগে সুষমা চক্রভেদী রইলা।।এর মধ্য আরেকটা নারী বটে রয়। চিত্রানারী বলে তাহার পরিচয়।। তারমধ্যে কুহুনারী বিরাজিত আছে।সেই কথাটা বলি আপনাদের কাছে।। সহস্রার হতে যে রস ঝরে পরে।কুহু নারীর মধ্য দিয়ে যায় শরীরে।। ওখান হতে রস ঝরে কথায় চলে যায়।ঐটা গিয়ে কুন্ডলীনির শীরে পরে মশায়।।যদি কেও আল জিহ্বা উল্টা করে। এক বিন্দু গুরু কৃপায় পান করিতে পারে।। তখন তার দেহ খানা অটল হয়ে গেল। প্রেমানন্দে বদন ভরে হরি হরি বল।।
(১ ,ইড়া,পিঙ্গলা,সুষুম্না : মানব দেহে ৭০০০০ নাড়ী রয়েছে যার মাঝে ১৪ টি প্রধান,এবং এর মাঝে ৩ নাড়ী প্রধান ইড়া,পিঙ্গলা,সুষুম্না।। ,সুষুম্না নাড়ির শেষ ভাগে কুলকুণ্ডলিনী অবস্থিত।।সুষুম্না কে জ্ঞান এর নারী বা ব্রম্নদার বলা হয় যার অন্তর্ভুক্ত আরো ৩ টি ব্রম্ননাড়ি অবস্থিত।।
২,মুলাধার:মানুষের মেরুদণ্ডের শেষ ভাগ (coccyx এর শেষ অংশ)
৩,শতদল পদ্ম/কমল: যোগ মতে বা শরীর বিজ্ঞান অনুসারে শরীরে ৮ টি মতান্তরে পদ্মের কথা জানা যায় যার মধ্যে ভ্রু যুগল এর মাঝে ধুম্র বর্ণ দ্বিদল পদ্মের অবস্থান।।
৪,কুলকুণ্ডলিনী : যোগ মতে / শরীর বিজ্ঞান অনুসারে মুলাধারে সুষুম্না নাড়ির শেষ ভাগে
দেহের মুল শক্তি/কুণ্ডলিনী সাড়ে তিন প্যাচে বেষ্টিত ও নিদ্রিত।।
স্রস্টার সর্বত্তম সৃষ্টির আধার এই মানব দেহ । এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সমস্ত কিছুর আস্তিত্বিক
অস্তিত্ব নিয়েই মানব দেহখানা সংরচিত । অধ্যাত্ব বিজ্ঞানের পঞ্চতত্ব অর্থ্যাৎ ক্ষিতি-অপ-তেজ- মরূৎ-ব্যোম বা পৃথিবী , জল-অগ্নি-বায়ু- আকাশ বা শব্দ , শ্পর্শ , রূপ-রস-গন্ধ প্রভৃতির অস্তিত্ব অতি সুক্ষভাবে দেহাভ্যন্তরে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত আছে । দেহাভ্যন্তরে নবলক্ষ গ্রন্থির মধ্যে নাভিদেশে রূদ্রগ্রন্থি , বক্ষস্থলে বিষ্ণুগ্রন্থি , এবং ভ্রুযুগলের মধ্যে ব্রহ্মগ্রন্থি নামে তিনটি গ্রন্থি প্রধান । দেহাভ্যন্তরে গুহ্যমূলে মূলাধারচক্র ,লিঙ্গমূলে স্বাধীষ্ঠানচক্র , নাভিমূলে মনিপুর চক্র , হৃদয়ে অনাহত চক্র , কন্ঠে বিশুদ্ধচক্র , এবং ভ্রু - যুগলের মধ্যে স্থিত আজ্ঞা চক্র নামে ছয়টি চক্রের মধ্যে মনিপুর চক্রে রূদ্রগ্রন্থি , অনাহত
চক্রে বিষ্ণুগ্রন্থি এবং আজ্ঞা চক্রে ব্রহ্মগ্রন্থি। মুলাধার চক্রে ক্ষিতি বা পৃথ্বি বা গন্ধতত্বের অবস্থান । স্বাধীষ্ঠান চক্রে অপ বা জল বা রসতত্বের অবস্থান । মনিপুর চক্রে তেজ বা অগ্নি বা রূপতত্বে অবস্থান । অনাহত চক্রে মরূৎ বা বায়ু বা স্পর্শ তত্বের অবস্থান । বিশুদ্ধ চক্রে বা আকাশ বা শব্দ তত্বের অবস্থান নিরূপিত হয়।
লালন সাইজী তার বানীতে বার বার "কুলকুণ্ডলিনী" সাধনা করে সপ্ত তালা/সপ্তচক্র ভেদের কথা বলে গেছেন।।
(সপ্ত তালা ভেদ করলে হাওয়ার ঘরে যাওয়া যায়,
হাওয়ার ঘরে গেলে পরে অধর মানুষ ধরা যায়)
যোগ মতে/শরীর বিজ্ঞান অনুসারে "কুলকুণ্ডলিনী নাড়ি" নিদ্রিত "যোগ মায়া'।
যাকে জাগ্রত করা যোগীর কাজ/সাধনা কারন দেহ মাতার মুল তিনিই)