মাঘী শুক্লপক্ষীয়া ‘জয়া’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তর পুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদরূপে বর্ণিত আছে। শ্রীগরুড়পুরাণে মাঘ মাসের শুক্লাপক্ষীয়া একাদশী তিথিকে ‘ভৈমী’ একাদশী নামে অভিহিত করা হয়েছে। কল্পান্তরে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন নাম দেখা যায়। পদ্মপুরাণ অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর নামই ‘পান্ডবা নির্জলা’ বা ‘ভীমসেনী’ (ভৈমী) একাদশী।
যুধিষ্ঠির বললেন- হে কৃষ্ণ! আপনি কৃপা করে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর সবিশেষ বর্ণনা করুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ! মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী ‘জয়া’ নামে প্রসিদ্ধ। এই তিথি সর্বপাপবিনাশিনী, সর্বশ্রেষ্ঠা, পবিত্রা, সর্বকাম ও মুক্তি প্রদায়িনী। এই ব্রতের ফলে মানুষ কখনও প্রেতত্ব প্রাপ্তি হয় না। এই একাদশীর নিম্নরূপ উপাখ্যান শোনা যায়। একসময় স্বর্গলোকে ইন্দ্র রাজত্ব করছিলেন। সেখানে অন্য দেবতারাও বেশ সুখেই ছিলেন।
তারা পারিজাত পুষ্প শোভিত নন্দনকাননে অস্পরাদের সাথে বিহার করতেন। একদিন পঞ্চাশ কোটি অস্পরা-নায়ক দেবরাজ ইন্দ্র স্বেচ্ছায় আনন্দভরে তাদের নৃত্য করতে বললেন। নৃত্যের সাথে গন্ধর্বগণ গান করতে লাগলেন। পুষ্পদত্ত, চিত্রসেন প্রভৃতি প্রধান প্রধান গন্ধর্বেরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। চিত্রসেনের পত্নীর নাম মালিনী। পুষ্পবন্তী নামে তাঁদের এক কন্যা ছিল। পুষ্পদত্তের পুত্রের নাম মাল্যবান। এই মাল্যবান পুষ্পবন্তীর রূপে মুগ্ধ হয়েছিল। পুষ্পবন্তী পুনঃ পুনঃ কটাক্ষ দ্বারা মাল্যবানকে বশীভূত করেছিল।
ইন্দ্রের প্রীতিবিধানের জন্য তারা দুজনেই নৃত্যগীতের সেই সভায় যোগদান করেছিল। কিন্তু একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট থাকায় উভয়েরই চিত্ত বিভ্রান্ত হচ্ছিল। সেখানে তারা পরস্পর কেবল দৃষ্টিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকল। ফলে গানের ক্রম বিপর্যয় ঘটল। তাদের এইরকম তাল-মান ভঙ্গভাব দেখে তারা যে পরস্পর কামাসক্ত হয়েছে, দেবরাজ ইন্দ্র তা বুঝতে পারলেন। তখন ক্রোধবশে তিনি তাদের অভিশাপ দিলেন- রে মূঢ়! তোমরা আমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছ। তোমাদের ধিক! এখনই তোমরা পিশাচযোনী লাভ করে মর্ত্যলোকে নিজ দুষ্কর্মের ফল ভোগ কর।
ইন্দ্রের অভিশাপে তারা দুজন দুঃখিত মনে হিমালয় পর্বতে বিচরণ করছিল। পিশাচত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় তারা অত্যন্ত দুঃখ ভোগ করতে লাগল। হিমালয়ে প্রচন্ড শীতে কাতর হয়ে নিজেদের পূর্বপরিচয় বিস্মৃত হল। এইভাবে অতিকষ্টে সেখানে দিনযাপন করতে লাগল।
একদিন পিশাচ নিজপত্নী পিশাচীকে বলল- সামান্য মাত্র পাপ করিনি। অথচ নরকযন্ত্রণার মতো পিশাচত্ব প্রাপ্ত হয়েছি। অতএব এখন থেকে আর কখনও কোন পাপকর্ম করব না। এইভাবে চিন্তা করে তারা সেই পর্বতে মৃতপ্রায় বাস করতে লাগল। মাল্যবান ও পুষ্পবন্তীর পূর্ব কোন পুণ্যবশত সেই সময় মাঘী শুক্লপক্ষীয়া ‘জয়া’ একাদশী তিথি উপস্থিত হল। তারা একটি অশ্বত্থ বৃক্ষতলে নিরাহারে নির্জলা অবস্থায় দিবানিশি যাপন করল। শীতের প্রকোপে অনিদ্রায় রাত্রি অতিবাহিত হল।
পরদিন সূর্যোদয়ে দ্বাদশী তিথি উপস্থিত হল। জয়া একাদশীর দিন অনাহার ও রাত্রি জাগরণে তাদের ভক্তির অনুষ্ঠান পালিত হল। এই ব্রত পালনের ফলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় তাদের পিশাচত্ব দূর হল। তারা দুজনেই তাদের পূর্বরূপ ফিরে পেল। তারপর তারা স্বর্গে ফিরে গেল। দেবরাজ তাদেরকে দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- কোন পূণ্য ফলে তোমাদের পিশাচত্ব দূর হল। আমার অভিশাপ থেকে কে তোমাদের মুক্ত করল?
মাল্যবান বললেন- হে প্রভু! ভগবান বাসুদেবের কৃপায় জয়া একাদশী ব্রতের পুণ্যপ্রভাবে আমাদের পিশাচত্ব দূর হয়েছে। তাদের কথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র বললেন- হে মাল্যবান, তোমরা এখন থেকে আবার অমৃত পান কর। একাদশী ব্রতে যাঁরা আসক্ত এবং যাঁরা কৃষ্ণভক্তি-পরায়ণ তাঁরা আমাদেরও পূজ্য বলে জানবে। এই দেবোলোকে তুমি পুষ্পবন্তীর সাথে সুখে বাস কর।
হে মহারাজ! এই ‘জয়া’ একাদশী ব্রত ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপকেও বিনাশ করে। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার দানের ফল লাভ হয়। সকল যজ্ঞ ও তীর্থের পুণ্যফল এই একাদশী প্রভাবে আপনা হতেই লাভ হয়। অবশেষে মহানন্দে অনন্তকাল বৈকুন্ঠ বাস হয়। এই জয়া একাদশী ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়।
ekadashi24 |
আরও পড়ুন
(১) বরুথিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২) মোহিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৩) অপরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৪) পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৫) যোগিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৭) কামিকা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৮) পবিত্রারোপণী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৯) অন্নদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১০) পার্শ্ব (পরিবর্তিণী) একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১১) ইন্দিরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১২) পাশাঙ্কুশা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৩) রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৪) উত্থান একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৫) উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৬) মোক্ষদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৭) সফলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৮) পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৯) ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২০) জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২১) বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২২) আমলকী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৩) পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৪) কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৫) পদ্মিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৬) পরমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১) বরুথিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২) মোহিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৩) অপরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৪) পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৫) যোগিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৭) কামিকা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৮) পবিত্রারোপণী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(৯) অন্নদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১০) পার্শ্ব (পরিবর্তিণী) একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১১) ইন্দিরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১২) পাশাঙ্কুশা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৩) রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৪) উত্থান একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৫) উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৬) মোক্ষদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৭) সফলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৮) পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(১৯) ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২০) জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২১) বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২২) আমলকী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৩) পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৪) কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৫) পদ্মিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৬) পরমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
(২৭) অষ্ট মহাদ্বাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
* একাদশীর উপবাসের দিন নির্ণয় নিয়ে বিভ্রান্তি
* একাদশী কী? কিভাবে একাদশীর আবির্ভাব হলো
* শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সকল অধ্যায় সমূহ