হরেকৃষ্ণ, নিজে একাদশী মহাব্রত পালন করুন এবং অন্যকে একাদশী মহাব্রত পালন করতে উৎসাহিত করুন। নোটিশঃএকাদশী২৪” সনাতন  ধর্মীয় বিষয়ক একটি মুক্তকোষ।এখানে সনাতন  ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় সংরক্ষণ করে রাখা হয়।আপনিও আপনার চারপাশের সনাতন  ধর্মীয় যেকোন বিষয় লিখে পাঠিয়ে দিন সম্পাদক বরাবর।আপনিও হয়ে যান একাদশী২৪’ ত্রর একজন গর্বিত সংগ্রাহক।মেইলঃ ekadashi24team@gmail.com।শুভকামনা সাইটটি ভিজিট করার জন্য।

প্রথম স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়, দিব্য ভাব এবং দিব্য সেবা

দ্বিতীয় অধ্যায়

দিব্য ভাব এবং দিব্য সেবা

শ্লোক ১

ব্যাস উবাচ

ইতি সম্প্রশ্নসংহৃষ্টো বিপ্রাণাং রৌমহর্ষণিঃ।
প্রতিপূজ্য বচস্তেষাং প্রবক্তমুপচক্রমে ॥ ১ ॥

অনুবাদ
রোমহর্ষণ-পুত্র উগ্রশ্রবা (সূত গোস্বামী) শৌনকাদি ব্রাহ্মণদের সেই সব প্রশ্নে সম্পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত হয়ে তাঁদের ধন্যবাদ জানালেন এবং তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করলেন।

শ্লোক ২

সূত উবাচ

যং প্রব্রজন্তমনুপেতমপেতকৃত্যং
দ্বৈপায়নো বিরহকাতর আজুহাব।
পুত্রেতি তন্ময়তয়া তরবোহভিনেদু-
স্তং সর্বভূতহৃদয়ং মুনিমানতোহস্মি ॥ ২ ॥

অনুবাদ
শ্রীল সূত গোস্বামী বললেনঃ আমি সেই মহর্ষিকে (শুকদেব গোস্বামী) আমার প্রণতি নিবেদন করছি, যিনি সমস্ত জীবের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারেন। তিনি যখন সন্ন্যাস অবলম্বন করার জন্য উপনয়ন অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই গৃহত্যাগ করে চলে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর পিতৃদেব শ্রীল ব্যাসদেব তাঁর বিরহে কাতর হয়ে তাঁকে "হে পুত্র! হে পুত্র!" বলে আহ্বান করেছিলেন, তখন তাঁর ভাবনায় তন্ময় বৃক্ষরাজিও বিরহকাতর পিতার ব্যথায় ব্যথিত হয়ে প্রত্যুত্তর করেছিল।

শ্লোক ৩

যঃ স্বানুভাবমখিলশ্রুতিসারমেক-
মধ্যাত্মদীপমতিতিতীর্ষতাং তমোহন্ধম্।
 সংসারিণাং করুণয়াহ পুরাণগুহ্যং
তং ব্যাসসূনুমুপয়ামি গুরুং মুনীনাম্ ॥ ৩।॥

অনুবাদ
সংসাররূপ গভীর অন্ধকার উত্তীর্ণ হওয়ার অভিলাষী বিষয়াসক্ত মানুষদের কাছে কৃপা করে যিনি স্বীয় প্রভাব-জ্ঞাপক সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারভূত অনুপম আত্মতত্ত্ব প্রকাশক দীপ-সদৃশ সর্বপুরাণ-রহস্য শ্রীমদ্ভাগবত বলেছিলেন, সেই মুনিগণের গুরু ব্যাস-তনয় শ্রীল শুকদেবকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

শ্লোক ৪

নারায়ণং নমস্কৃত্য নরং চৈব নরোত্তমম্।
দেবীং সরস্বতীং ব্যাসং ততো জয়মুদীরয়েৎ ॥ ৪ ॥


অনুবাদ
সংসার-বিজয়ী গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত উচ্চারণ করার পূর্বে পরমেশ্বর ভগবান নারায়ণ, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নর-নারায়ণ ঋষি নামক ভগবৎ-অবতার, বিদ্যাদেবী সরস্বতী এবং ব্যাসদেবকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

শ্লোক ৫

মুনয়ঃ সাধু পৃষ্টোহহং ভবদ্ভিলোকমঙ্গলম্।
যৎকৃতঃ কৃষ্ণসংপ্রশ্নো যেনাত্মা সুপ্রসীদতি ॥ ৫ ॥


অনুবাদ

হে ঋষিগণ, আপনারা আমাকে যথার্থ প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করেছেন। আপনাদের প্রশ্নগুলি অতি উত্তম, কেন না সেগুলি কৃষ্ণ-বিষয়ক এবং তাই তা জগতের মঙ্গল সাধন করে। এই ধরনের পরিপ্রশ্নের দ্বারাই কেবল আত্মা সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন হয়।

শ্লোক ৬

স বৈ পুংসাং পরো ধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে।
অহৈতুক্যপ্রতিহতা যয়াত্মা সুপ্রসীদতি ॥ ৬ ॥


অনুবাদ

সমস্ত মানুষের পরম ধর্ম হচ্ছে সেই ধর্ম যার দ্বারা ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞানের অতীত শ্রীকৃষ্ণে অহৈতুকী এবং অপ্রতিহতা ভক্তি লাভ করা যায়। সেই ভক্তিবলে অনর্থ নিবৃত্তি হয়ে আত্মা যথার্থ প্রসন্নতা লাভ করে।

শ্লোক ৭

বাসুদেবে ভগবতি ভক্তিযোগঃ প্রয়োজিতঃ।
জনয়ত্যান্ড বৈরাগ্যং জ্ঞানং চ যদহৈতুকম্ ॥ ৭ ॥

অনুবাদ

ভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা হলে অচিরেই শুদ্ধ জ্ঞানের উদয় হয় এবং জড়জাগতিক বিষয়ের প্রতি অনাসক্তি আসে।

শ্লোক ৮

ধর্মঃ স্বনুষ্ঠিতঃ পুংসাং বিষক্সেনকথাসু যঃ।
নোৎপাদয়েদ্যদি রতিং শ্রম এব হি কেবলম্ ॥৮॥

অনুবাদ

স্বীয় বৃত্তি অনুসারে বর্ণাশ্রম পালন রূপ স্ব-ধর্ম অনুষ্ঠান করার ফলেও যদি পরমেশ্বর ভগবানের মহিমা শ্রবণ-কীর্তনে আসক্তির উদয় না হয়, তা হলে তা বৃথা শ্রম মাত্র।

শ্লোক ৯

ধর্মস্য হ্যাপবর্জ্যস্য নার্থোহর্থায়োপকল্পতে।
নার্থস্য ধর্মৈকান্তস্য কামো লাভায় হি স্মৃতঃ ॥ ৯ ॥

অনুবাদ

সমস্ত ধর্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে চরম মুক্তি লাভ করা। তা কখনো জড় বিষয় লাভের আশায় অনুষ্ঠান করা উচিত নয়। অধিকন্তু, তত্ত্বদ্রষ্টা মহর্ষিরা নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, যাঁরা পরম ধর্ম অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন, তাঁরা যেন কখনই ইন্দ্রিয়-সুখভোগের উদ্দেশ্যে জড়-জাগতিক লাভের প্রত্যাশী না হন।

শ্লোক ১০

কামস্য নেন্দ্রিয়প্রীতিলাভো জীবেত যাবতা।
জীবস্য তত্ত্বজিজ্ঞাসা নার্থো যশ্চেহ কর্মভিঃ ॥ ১০ ॥

অনুবাদ

ইন্দ্রিয় সুখভোগকে কখনই জীবনের উদ্দেশ্য বলে গ্রহণ করা উচিত নয়। সুস্থ জীবন যাপন করা অথবা আত্মাকে নির্মল রাখার বাসনাই কেবল করা উচিত, কেন না মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরম-তত্ত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা। এ ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কর্ম করা উচিত নয়।

শ্লোক ১১

বদন্তি তত্তত্ত্ববিদস্তত্ত্বং যজ্ঞানমদ্বয়ম্।
ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দ্যতে ।॥ ১১ ॥

অনুবাদ

যা অদ্বয় জ্ঞান, অর্থাৎ এক এবং অদ্বিতীয় বাস্তব বস্তু, জ্ঞানীগণ তাকেই পরমার্থ বলেন। সেই তত্ত্ববস্তু ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান-এই ত্রিবিধ সংজ্ঞায় সংজ্ঞিত বা কথিত হন।

শ্লোক ১২

তচ্ছদ্দধানা মুনয়ো জ্ঞানবৈরাগ্যযুক্তয়া।
পশ্যন্ত্যাত্মনি চাত্মানং ভক্ত্যা শ্রুতগৃহীতয়া । ১২॥


অনুবাদ

অপ্রাকৃত বস্তুতে সুদৃঢ় ও নিশ্চয় বিশ্বাসযুক্ত মুনিগণ জ্ঞান এবং বৈরাগ্যযুক্ত হয়ে শাস্ত্র শ্রবণজনিত উপলব্ধি অনুসারে ভগবানের প্রতি প্রেমময়ী সেবার দ্বারা তাঁদের শুদ্ধ হৃদয়ে পরমাত্মারূপে সেই তত্ত্ববস্তুকে দর্শন করেন।

শ্লোক ১৩

অতঃ পুস্তিদ্বিজশ্রেষ্ঠা বর্ণাশ্রমবিভাগশঃ।
স্বনুষ্ঠিতস্য ধর্মস্য সংসিদ্ধিইরিতোষণম্ ॥ ১৩ ॥


অনুরাদ

হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ, তাই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে, স্বীয় প্রবণতা অনুসারে বর্ণাশ্রম ধর্ম পালন করার মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির সন্তুষ্টি-বিধান করাই হচ্ছে স্ব-ধর্মের চরম ফল।

শ্লোক ১৪

তস্মাদেকেন মনসা ভগবান্ সাত্বতাং পতিঃ।
শ্রোতব্যঃ কীর্তিতব্যশ্চ ধ্যেয়ঃ পূজ্যশ্চ নিত্যদা ॥ ১৪ 

অনুবাদ

তাই একাগ্র চিত্তে, নিরন্তর ভক্তবৎসল ভগবানের মহিমা শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ এবং তাঁর আরাধনা করা কর্তব্য।

শ্লোক ১৫

যদনুধ্যাসিনা যুক্তাঃ কর্মগ্রন্থিনিবন্ধনম্।
ছিন্দন্তি কোবিদাস্তস্য কোন কুর্যাৎকথারতিম্ ॥ ১৫ ॥

অনুবাদ

পরমেশ্বর ভগবানের অনুস্মরণ রূপ তরবারির দ্বারা যথার্থ জ্ঞানী পুরুষেরা কর্ম-বন্ধন ভেদন করেন। তাই সেই ভগবানের কথায় কেই বা রতিযুক্ত হবে না?

শ্লোক ১৬

শুশূষোঃ শ্রদ্দধানস্য বাসুদেবকথারুচিঃ ।
স্যান্মহৎসেবয়া বিপ্রাঃ পুণ্যতীর্থনিষেবণাৎ ॥ ১৬ ॥

অনুবাদ

হে ব্রাহ্মণ ঋষিগণ, সব রকমের পাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ভগবদ্ভক্তদের সেবা
করার ফলে মহৎ-সেবা সাধিত হয়। এই ধরনের সেবার ফলে কৃষ্ণকথা শ্রবণে
আসক্তির উদয় হয়।

শ্লোক ১৭

শৃণ্বতাং স্বকথাঃ কৃষ্ণঃ পুণ্যশ্রবণকীর্তনঃ ।
 হৃদ্যন্তঃস্থো হ্যভদ্রাণি বিধুনোতি সুহৃৎসতাম্ ।॥ ১৭ ॥

অনুবাদ

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, যিনি পরমাত্মারূপে সকলের হৃদয়েই বিরাজ করেন এবং যিনি হচ্ছেন সাধুবর্গের সুহৃদ, তিনি তাঁর পবিত্র কথা শ্রবণ এবং কীর্তনে রতিযুক্ত ভক্তদের হৃদয়ের সমস্ত ভোগ-বাসনা বিনাশ করেন।

শ্লোক ১৮

নষ্টপ্রায়েম্বভদ্রেষু নিত্যং ভাগবতসেবয়া।
ভগবত্যুত্তমশ্লোকে ভক্তির্ভবতি নৈষ্ঠিকী ॥ ১৮ ॥

অনুবাদ

নিয়মিতভাবে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করলে এবং ভগবানের শুদ্ধ ভক্তের সেবা করলে হৃদয়ের সমস্ত কলুষ সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়, এবং তখন উত্তম শ্লোকের দ্বারা বন্দিত পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমময়ী ভক্তি সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।

শ্লোক ১৯

তদা রজস্তমোভাবাঃ কামলোভাদয়শ্চ যে।
চেত এতৈরনাবিদ্ধং স্থিতং সত্ত্বে প্রসীদতি ॥ ১৯ ॥

অনুবাদ
যখন হৃদয়ে নৈষ্ঠিকী ভক্তির উদয় হয়, তখন রজ ও তমোগুণের প্রভাবজাত কাম, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি রিপুসমূহ হৃদয় থেকে বিদূরিত হয়ে যায়। তখন ভক্ত সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত হয়ে সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন হন।

শ্লোক ২০

এবং প্রসন্নমনসো ভগবদ্ভক্তিযোগতঃ ।
ভগবত্তত্ত্ববিজ্ঞানং মুক্তসঙ্গস্য জায়তে ॥ ২০ ।॥

অনুবাদ

এইভাবে শুদ্ধ-সত্ত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে ভক্তিযোগে যুক্ত হওয়ার ফলে যাঁর চিত্ত প্রসন্ন হয়েছে, তিনি সব রকম জড়-বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবত্তত্ত্ব-বিজ্ঞান উপলব্ধি করেন।

শ্লোক ২১

ভিদ্যতে হৃদয়গ্রন্থিশ্ছিদ্যন্তে সর্বসংশয়াঃ।
 ক্ষীয়ন্তে চাস্য কর্মাণি দৃষ্ট এবাত্মনীশ্বরে ।। ২১ ॥

অনুবাদ

আত্মার আত্মা পরমাত্মা ভগবানকে দর্শন হলে হৃদয়গ্রন্থি ছিন্ন হয়, সমস্ত সংশয় দূর হয় এবং সমস্ত কর্মফল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

শ্লোক ২২

অতো বৈ কবয়ো নিত্যং ভক্তিং পরময়া মুদা।
বাসুদেবে ভগবতি কুর্বন্ত্যাত্মপ্রসাদনীম্ ।। ২২

অনুবাদ
তাই সমস্ত পরমার্থবাদীরা চিরকাল গভীর আনন্দ সহকারে পরমেশ্বর ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের সেবা করে আসছেন, কেন না এই ধরনের প্রেমময়ী সেবা আত্মাকে অনুপ্রাণিত করে।

শ্লোক ২৩

সত্ত্বং রজস্তম ইতি প্রকৃতেগুণাস্তৈ-
 যুক্তঃ পরঃ পুরুষ এক ইহাস্য ধত্তে।
স্থিত্যাদয়ে হরিবিরিঞ্চিহরেতি সংজ্ঞাঃ
শ্রেয়াংসি তত্র খলু সত্ত্বতনোনৃণাং স্যুঃ ।। ২৩ ৷৷

অনুবাদ
পরমেশ্বর ভগবান সত্ত্ব, রজ এবং তম নামক জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত। জড় জগতের সৃষ্টি, পালন এবং বিনাশের জন্য তিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব এই তিনটি গুণজাত রূপ ধারণ করেন। এই তিনটি রূপের মধ্যে, সমস্ত মানুষই সত্ত্বগুণজাত রূপ বিষ্ণুর থেকে আত্যন্তিক মঙ্গল লাভ করতে পারেন।

শ্লোক ২৪

পার্থিবাদ্দারুণো ধূমস্তস্মাদগ্নিস্ত্রয়ীময়ঃ।
তমসস্ত রজস্তস্মাৎসত্ত্বং যদ্ৰহ্মদর্শনম্ ॥ ২৪ ॥

অনুবাদ

কাঠ হচ্ছে মৃত্তিকার বিকার, কিন্তু ধোঁয়া কাঠ থেকে শ্রেয়। আর অগ্নি তার
থেকেও শ্রেয়, কেন না অগ্নির দ্বারা (বৈদিক যজ্ঞের মাধ্যমে) উচ্চতর জ্ঞান লাভ
করা যায়। তেমনই, রজোগুণ তমোগুণ অপেক্ষা শ্রেয়; কিন্তু সত্ত্বগুণ সর্বশ্রেষ্ঠ, কেন
না সত্ত্বগুণের দ্বারা আমরা পরম সত্যকে উপলব্ধি করতে পারি।

শ্লোক ২৫

ভেজিরে মুনয়োহথাগ্রে ভগবন্তমধোক্ষজম্।
সত্ত্বং বিশুদ্ধং ক্ষেমায় কল্পন্তে যেহনু তানিহ ॥ ২৫ ॥

অনুবাদ

পূর্বে সমস্ত মহর্ষিরা পরমেশ্বর ভগবানের সেবা করেছিলেন, কেন না তিনি জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণের অতীত। তাঁরা জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে আত্যন্তিক মঙ্গল সাধনের জন্য তাঁর আরাধনা করেছিলেন। যাঁরা সেই সমস্ত মহাত্মাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাঁরাও এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

শ্লোক ২৬

মুমুক্ষবো ঘোররূপান্ হিত্বা ভূতপতীনথ।
নারায়ণকলাঃ শান্তা ভজন্তি হ্যনসূয়বঃ ॥ ২৬ ॥

অনুবাদ

যাঁরা মুক্তি লাভের জন্য ঐকান্তিকভাবে আগ্রহী, তাঁরা অবশ্যই অসূয়ারহিত এবং তাঁরা সকলের প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ণ। তথাপি তাঁরা ভয়ঙ্কর আকৃতি বিশিষ্ট দেব-দেবীদের ত্যাগ করে কেবল পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু এবং তাঁর অংশ অবতারদের নিত্য আনন্দময় রূপের আরাধনা করেন।

শ্লোক ২৭

রজস্তমঃপ্রকৃতয়ঃ সমশীলা ভজন্তি বৈ।
পিতৃভূতপ্রজেশাদীন শ্রিয়ৈশ্বর্য প্রজেপ্সবঃ ।॥ ২৭ ॥

অনুবাদ

যারা রজ ও তমোগুণের অধীন, তারা পিতৃপুরুষ, ভূত এবং প্রজাপতিদের পূজা করে, কেন না তারা স্ত্রী, ঐশ্বর্য, শক্তি এবং সন্তান-সন্ততি আদি জড় বিষয়-ভোগের বাসনার দ্বারা প্রভাবিত।

শ্লোক ২৮-২৯

বাসুদেবপরা বেদা বাসুদেবপরা মখাঃ ।
 বাসুদেবপরা যোগা বাসুদেবপরাঃ ক্রিয়াঃ ॥ ২৮ ॥
বাসুদেবপরং জ্ঞানং বাসুদেবপরং তপঃ।
বাসুদেবপরো ধর্মো বাসুদেবপরা গতিঃ ॥ ২৯ ৷৷

অনুবাদ

বৈদিক শাস্ত্রে জ্ঞানের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। যজ্ঞ সম্পাদনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানের প্রীতি-বিধান এবং যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁকে জানা। সমস্ত সকাম কর্মের চরম ফল তিনিই দান করেন। পরম জ্ঞান এবং সমস্ত তপশ্চর্যার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁকে জানা এবং তাঁর প্রতি প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হওয়াই হচ্ছে ধর্মের উদ্দেশ্য। তিনি হচ্ছেন জীবনের পরম উদ্দেশ্য।

শ্লোক ৩০

স এবেদং সসর্জাগ্রে ভগবানাত্মমায়য়া।
সদসদৃপয়া চাসৌ গুণময্যাগুণো বিভুঃ । ৩০ ৷৷

অনুবাদ

এই পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং নির্গুণ হয়ে প্রথমে কার্য-কারণাত্মিকা ত্রিগুণময়ী স্বীয় বহিরঙ্গা শক্তি মায়াকে নিরীক্ষণ করে এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন।

শ্লোক ৩১

তয়া বিলসিতেম্বেষু গুণেষু গুণবানিব।
অন্তঃপ্রবিষ্ট আভাতি বিজ্ঞানেন বিজ্ন্তিতঃ ৷৷ ৩১ ॥


অনুবাদ

জড় জগৎ সৃষ্টি করার পর ভগবান (বাসুদেব) নিজেকে বিস্তার করে তার মধ্যে প্রবেশ করেন। যদিও তিনি জড়া প্রকৃতির গুণগুলির মধ্যে অবস্থিত এবং যদিও মনে হয় যে এই জড় জগতে তাঁর সৃষ্টি হয়েছে, তবুও তিনি তাঁর অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত এবং পূর্ণ জ্ঞানময়।

শ্লোক ৩২

যথা হ্যবহিতো বহ্নিদারুম্বেকঃ স্বযোনিষু।
নানেব ভাতি বিশ্বাত্মা ভূতেষু চ তথা পুমান্ ।। ৩২ ।।


অনুবাদ

আগুন যেমন কাঠের মধ্যে নিহিত থাকে, তেমনই পরমেশ্বর ভগবানও পরমাত্মারূপে সব কিছুর মধ্যে পরিব্যাপ্ত। যদিও তিনি অদ্বিতীয় পরম পুরুষ, তবুও মনে হয় তিনি যেন নানারূপে প্রকাশিত হয়েছেন।

শ্লোক ৩৩

অসৌ গুণময়ৈভাবৈর্ভূতসূক্ষ্মেন্দ্রিয়াত্মভিঃ ।
স্বনির্মিতেষু নির্বিবষ্টো ভুক্তে ভূতেষু তদ্‌গুণান্ ॥ ৩৩ ৷৷


অনুবাদ

পরমাত্মা প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত তাঁর সৃষ্ট জীবেদের দেহে প্রবেশ করেন এবং সূক্ষ্ম মনের দ্বারা তাদের এই সমস্ত গুণগুলির প্রতিক্রিয়া ভোগ করান।

শ্লোক ৩৪

ভাবয়ত্যেষ সত্ত্বেন লোকান্ বৈ লোকভাবনঃ ।
লীলাবতারানুরতো দেবতির্যত্ নরাদিষু ।। ৩৪ ॥

অনুবাদ

এইভাবে সমস্ত জগতের পতি দেবতা, মনুষ্য এবং পশু অধ্যুষিত সমস্ত গ্রহ লোকগুলি প্রতিপালন করেন। বিভিন্ন অবতারে তিনি তাঁর লীলা-বিলাস করে বিশুদ্ধ-সত্ত্বেও অধিষ্ঠিত জীবসমূহকে উদ্ধার করেন।

ইতি-"দিব্য ভাব এবং দিব্য সেবা" নামক শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য।


Read: প্রথম স্কন্ধ, তৃতীয় অধ্যায়, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সমস্ত অবতারের উৎস



একাদশী

হরেকৃষ্ণ♥ নিজে একাদশী মহাব্রত পালন করুন এবং অন্যকে একাদশী মহাব্রত পালন করতে উৎসাহিত করুন #ekadashi24

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

If you have any doubts. please let me know.

নবীনতর পূর্বতন

other blog

Youtube Channel Image
sriRamayanaudio Subscribe To listen Valmiki Ramayan
Subscribe